জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার কচুয়া-বেতাগী ফেরিঘাটে ভোগান্তি যেন শেষ হচ্ছে না। একদিকে ইজারাদারের স্বেচ্ছাচারিতা, আরেকদিকে ভাড়ার নৈরাজ্য সমাজে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এখানকার মানুষজন গভীর উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ, বিশেষত যাত্রীরা সরকারি নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা (চার্টবোর্ড) কে উপেক্ষা করে এটিকে লজ্জাজনকভাবে অগ্রাহ্য করছেন। তাদের কাছে অভিযোগ উঠেছে যে, যাত্রীরা এবং চালকরা তাদের পকেটে বড় চাপ অনুভব করছেন, কারণ বেশ কয়েক গুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবের কারণে এ রুটে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ আর যেন অন্যায়ের জিম্মি হয়ে রয়েছেন।
ভাড়ার তালিকায় শুভঙ্করের ফাঁকি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফেরিঘাটে ভাড়ার কোনো তালিকা বা চার্টবোর্ডের চিহ্ন দেখা যায় না। তবে সরকারি আইন অনুসারে এই তালিকার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। ভাড়ার হার কীভাবে আদায় করা হচ্ছে তার মধ্যে কোনো সঙ্গতি নেই। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে চার্টবোর্ডে ভাড়া যেখানে মাত্র ৫ টাকা নির্ধারিত তাও আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা করে। ইজিবাইক ও তিন চাকার যানের ক্ষেত্রেও নির্ধারিত ভাড়া যেখানে মাত্র ১০ টাকা, কিন্তু এখানে আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা। অথচ পিকআপ ও অন্যান্য যানবাহনে কোনো বিধিবিধানই মানা হচ্ছে না।
অন্যদিকে, দায় এড়াচ্ছে কর্তৃপক্ষ ঘাটে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা চার্টবোর্ড না থাকার কারণ জানতে চাওয়ার পর জানালেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কোনো বোর্ড দেননি বলে কোনো তালিকা নেই। কিন্তু এখানে স্থানীয়দের দাবি একেবারে ভিন্ন; তারা মনে করছেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি গোপন রাখতেই পরিকল্পিতভাবে তালিকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এক আলামিন নামের স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, "ফেরিঘাট তৈরির আগে দূরত্ব অনেক বেশি ছিল, তখনও ২০ টাকা ভাড়া নিত। এখন দূরত্ব কমলেও একটি চক্র সিন্ডিকেট করে সেই ২০ টাকাই আদায় করছে, যা সর্বোচ্চ ১০ টাকা হওয়া উচিত ছিল। এছাড়া আধারে রাত হলে ভাড়ার হার বেড়ে যায়, গুণ বেড়ে যায় ৩-৪ গুণ পর্যন্ত।"
একই ব্যক্তির কব্জায় ফেরি ও খেয়াঘাট অভিযোগ উঠেছে, এই ফেরিঘাট এবং পাশের খেয়াঘাটের ইজারাদার একই ব্যক্তি হওয়ায় এখানকার যাত্রী সেবার মান অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থায় নেমে এসেছে। এখানে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো বিধিনিষেধ না মেনে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেরি চালাচ্ছেন না। তাদের খেয়াঘাটের মাধ্যমে লাভ বেশি হওয়ার কারণে ফেরি চলাচল করানো হলে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করা হয় বলে অভিযোগ আছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন যেন নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে ভুক্তভোগী ইজিবাইক চালকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দীর্ঘ দিন ধরে এই অনিয়ম চললে প্রশাসনিক পদক্ষেপের অভাব দেখা যায়। একটি প্রভাবশালী চক্র সরকারী আইন অমান্য করে জনসাধারণের পকেট কেটে নিচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতির কোন আশা নেই যেন। এখনই দরকার সাধারণ মানুষের পক্ষে দেখা এবং তাৎক্ষণিক কার্যকর পদক্ষেপ যেন গ্রহণ করে প্রশাসন। এই ভাড়ার নৈরাজ্য বন্ধ করতে এবং ফেরিঘাটে দৃশ্যমান ভাড়ার চার্টবোর্ড স্থাপনে অনতিবিলম্বে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চালকরা এটিকে অত্যন্ত জরুরিভাবে দাবি করছেন।



















