close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

কালো টাকা সাদা করার বিধান থাকছে না , অর্থ উপদেষ্টা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নতুন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল। ঋণ ব্যবহার হবে সঠিক খাতে—জানালেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।....

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এবার বড় চমক দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন বাজেটে আর কোনোভাবেই কালো টাকা বৈধ করার বা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি। রোববার (২২ জুন) বাজেট পাস-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ঋণের অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগানো হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোনো বাড়তি ঋণের বোঝা দিয়ে যেতে চাই না। তাই কালো টাকা সাদা করার বিধান এবার থাকছে না।

এই ঘোষণার মাধ্যমে বহুদিন ধরেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ‘কালো টাকা সাদা করার আইন’ অবশেষে বাতিল হলো, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পথে সরকারের একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। আজই প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এই বাজেট চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ চলতি মাসের ২ জুন টেলিভিশনের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করেন। সংসদ না থাকায় এবার জনপরিসরে বাজেট নিয়ে খুব বেশি আলোচনা না হলেও, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জনগণের মতামত নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নতুন অর্থবছরে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ৩.৬ শতাংশ, যা পূরণ করা হবে দেশি ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে।

অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, বাজেট ঘাটতি মেটাতে নতুন করে করের বোঝা চাপানো হবে না। বরং যে অর্থ থাকবে, তা যেন যথাযথভাবে ব্যবহার হয়—সে বিষয়টি নিশ্চিত করতেই এবার কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ তুলে নেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, রিয়েল এস্টেট খাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বেশ জনপ্রিয় ছিল। তবে এই চর্চা স্বচ্ছতা নষ্ট করছে এমন অভিযোগও কম ছিল না।

এবারের বাজেটের মাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—ফ্ল্যাট কেনা বা ভবন নির্মাণে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করে সাদা করার সুযোগ আর থাকছে না। বাজেট ঘোষণার পর থেকেই এই সিদ্ধান্তটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নতুন বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য হলো—৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন। সরকার বিশ্বাস করে, কালো টাকার অবৈধ প্রবাহ বন্ধ হলে দেশের অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা ফিরবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়বে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বাজেট প্রণয়নে সকল খাতের মতামত নেওয়ার চেষ্টা করেছি। বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশন আমাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করেছে। বাজেটের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যা সংশোধনের পর কিছু মন্ত্রণালয়ে বাড়ানো এবং কিছু ক্ষেত্রে কমানো হয়।
এইবারের বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থাকলেও ১০টি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাকি ৫২টি মন্ত্রণালয়ের কারও বরাদ্দ অপরিবর্তিত, আবার কারও কমানো হয়েছে।

বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার বিধান না রাখার সিদ্ধান্তকে অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটা শুধু রাজস্ব বাড়ানোর কৌশল নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ পথে পরিচালিত করার একটি সাহসী পদক্ষেপ।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, “যেখানে অন্য বছরগুলোতে বাজেটে অঘোষিত সম্পদ বৈধ করার সুযোগ রাখা হতো, এবার সেখান থেকে সরে এসে সরকার জনগণের স্বার্থেই সঠিক বার্তা দিয়েছে।”

Inga kommentarer hittades