জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলনের ঝড়, ও নেতৃত্ব সংকট যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল রাতে একটি ফেসবুক পোস্টে জাতীয় নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ও জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক কনটেন্ট ক্রিয়েটর ডা. তাসনিম জারা জানান, “গত রাতটি ছিল সবচেয়ে কঠিন রাত।”
এই পোস্ট যেন শুধু ব্যক্তিগত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ নয়—বরং এটি ছিল একটি রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠার, নতুন নেতৃত্ব খোঁজার, এবং জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য আকুল আহ্বান।
মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ভাবনার গুঞ্জন: হঠাৎ করেই সংকট গভীর হলো
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের চিন্তা করছেন।
এই খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাৎ করে এক ধরনের শূন্যতা ও হতাশা নেমে আসে। কারণ, যিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের মুখ ছিলেন, তার এই সিদ্ধান্ত পুরো আন্দোলন ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
এই অবস্থায় ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন ডা. তাসনিম জারা, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে।
“এটা দোষারোপের সময় নয়, ভাবার সময়” – তাসনিম জারা
তাসনিম জারা লেখেন,
“জুলাই বিপ্লবের পর গত রাতটি ছিল সবচেয়ে কঠিন রাত। আমি এমন একটি ভাবনা শেয়ার করতে চাই যা আমাকে জাগিয়ে রেখেছে।”
তার স্ট্যাটাসে ফুটে ওঠে গভীর হতাশা, কিন্তু একইসঙ্গে প্রত্যয়ের আলো।
তিনি বলেন,
“এটা দোষারোপের মুহূর্ত নয়। এটা ভাবার মুহূর্ত। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ক্ষুদ্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অবিশ্বাস সমগ্র গণতান্ত্রিক উত্তরণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।”
তাসনিমের বক্তব্যে একটি বড় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটে, যেখানে তিনি বলেন, আমরা স্বাধীনতার জন্য রক্ত দেওয়া জাতির আশা বিনষ্ট করতে পারি না স্বল্পমেয়াদি কৌশলের জন্য।
“বিপ্লব জনগণ চালায়, নেতৃত্ব নয়” – শক্তিশালী বার্তা জাতির প্রতি
তার স্ট্যাটাসের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশটি হলো—
“বিপ্লব জনগণই পরিচালনা করেছেন। আর তাদের কাছেই আমরা আমাদের সংযম, সংলাপ ও ঐক্যের জন্য ঋণী।”
এই বার্তায় তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, পরিবর্তনের প্রকৃত চালক জনগণ, এবং নেতৃত্ব কেবলমাত্র একটি প্রতীক।
তিনি আরও বলেন,
“ইতিহাস আমাদের শেখায় যারা পরিবর্তনে ভয় পায়, তারা পুরনো ব্যবস্থা নতুন নামে ফিরিয়ে আনতে ভাঙনের ওপর নির্ভর করে।”
নেতৃত্বশূন্য আন্দোলনে আশার সুর
একদিকে রাজনৈতিক বিভাজন, অন্যদিকে আন্দোলনমুখী ঢাকায় ক্রমাগত অবরোধ আর জনভোগান্তি—সব মিলিয়ে আন্দোলনের গতি যেমন দুর্বল হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষও পড়ছেন বিভ্রান্তিতে।
এই অবস্থায় তাসনিম জারার মত একজন নিরপেক্ষ, জনপ্রিয় এবং শিক্ষিত কণ্ঠের পক্ষ থেকে ঐক্যের ডাক জাতিকে এক নতুন দিশা দেখাতে পারে।
তিনি বলেন,
“এই পরিস্থিতি যেন ঐক্যের দিকে মোড় ঘুরিয়ে আনে, বিভাজনের দিকে নয়।”
শেষ কথা: তাসনিম জারার পোস্ট কি জাতীয় ঐক্যের সূচনা হবে?
এই পোস্ট যেন কেবল একটি রাতের ঘুমহীন অভিজ্ঞতা নয়—বরং একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা ও জাতীয় আত্মজিজ্ঞাসার প্রতীক।
নেতৃত্বের অভাব, দ্বন্দ্বের বেড়াজাল, আর হতাশার আড়ালে থেকে তাসনিম জারার বার্তাটি জাতীয় জীবনে ঐক্যের নতুন বার্তা হিসেবে প্রতিধ্বনিত হতে পারে।
তার এই স্ট্যাটাস এখন প্রশ্ন তুলেছে—
👉 রাজনীতিকরা কি শুনবেন এই কণ্ঠস্বর?
👉 এই বার্তা কি হবে নতুন বিপ্লবের সূচনা?
সময়ই দেবে উত্তর। তবে তাসনিম জারার রাতের নিঃশ্বাসজাত পোস্ট ইতোমধ্যেই নাড়া দিয়েছে পুরো জাতিকে।