যুক্তরাষ্ট্রের দূত থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ আসনে! আসাদ আলম সিয়াম হলেন নতুন পররাষ্ট্রসচিব..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা শেষে এবার দেশের পররাষ্ট্রনীতির হাল ধরলেন আসাদ আলম সিয়াম। এক অভিজ্ঞ কূটনীতিকের অভাবনীয় এই পদোন্নতি ইতোমধ্যেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জানু..

বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম। আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জানায়, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে। জানা গেছে, আগামী রোববার থেকেই তিনি দায়িত্ব বুঝে নেবেন।

এই নিয়োগে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একটি কৌশলগত বার্তা স্পষ্ট—বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যেই অভিজ্ঞ কূটনীতিক সিয়ামকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনা হয়েছে।

আসাদ আলম সিয়াম এই পদে জায়গা করে নিলেন মো. জসীম উদ্দিনের জায়গায়, যিনি গত বছরের সেপ্টেম্বরে ২৭তম পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং চলতি বছরের ২২ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বিদায়ের পর ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে রুটিন দায়িত্বে ছিলেন মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী।

অবশেষে পূর্ণাঙ্গ সচিব হিসেবে যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হলো, তিনি শুধু একজন পেশাগত কূটনীতিক নন, বরং বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ একজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিনিধি।

১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন আসাদ আলম সিয়াম। দীর্ঘ সময় ধরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন তিনি। কেবল মাত্র এক দেশেই নয়, ফিলিপাইন, পালাউ, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, স্লোভাকিয়া—সব জায়গাতেই তার পদচিহ্ন রয়েছে।

বিশেষ করে মিলানে বাংলাদেশের প্রথম কনসাল জেনারেল হিসেবে তাঁর নিয়োগ ছিল একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। একইসঙ্গে তিনি ভিয়েনায় জাতিসংঘ অফিস ও ওপেক ফান্ডে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

অকাডেমিক জীবনেও আসাদ আলম সিয়াম ছিলেন ব্যতিক্রমী। তিনি একজন স্থপতি হিসেবে বুয়েট থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে নেদারল্যান্ডসের মাস্ট্রিচট স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট থেকে এমবিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবনে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য তিনি কাঠমান্ডুর সার্ক সচিবালয়, হাওয়াইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজ (APCSS), সিউলের আন্তর্জাতিক ফোরাম ফর এশিয়ান ন্যাশনাল সিকিউরিটি (IFAANS), এবং ঢাকার জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজে বিভিন্ন পেশাগত কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।

সিয়ামের কূটনৈতিক দক্ষতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ তাঁর আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণ। বিভিন্ন সময় তিনি অসংখ্য দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেন। জাতিসংঘের ESCAP (ইউএন এসকাপ)–এর বিকল্প স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবেও ব্যাংককে তাঁর অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়।

বিশ্ব রাজনীতির পালাবদলের সময় বাংলাদেশের কূটনৈতিক চাল এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে আসাদ আলম সিয়ামের অভিজ্ঞতা, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের জটিল বাস্তবতা বুঝতে পারার দক্ষতা এবং বহু ফোরামে বাংলাদেশের স্বার্থে কথা বলার অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করেছে।

এই নিয়োগকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন একটি কৌশলগত চাল হিসেবে, যা ভবিষ্যতের নির্বাচন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।

আসাদ আলম সিয়ামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন কোন পথে যাবে, সেটিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। একজন পেশাদার, অভিজ্ঞ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ কূটনীতিক হিসেবে তাঁর হাতে দেশের কূটনৈতিক হাল কতটা শক্তিশালীভাবে পরিচালিত হবে, তা সময়ই বলবে। তবে তাঁর নিয়োগ যে এক ইতিবাচক বার্তা—তা বলাই যায়।

Nema komentara