যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য আইডাহোর পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে রোববার দুপুরে শুরু হয়েছিল সাধারণ একটি অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। কিন্তু মুহূর্তেই সেই দৃশ্য রূপ নেয় ভয়াবহ রক্তাক্ত ঘটনায়। আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের লক্ষ্য করে আচমকাই শুরু হয় এলোপাতাড়ি গুলি। এতে নিহত হন দুইজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী, আহত হন আরও একজন, যাকে তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে কুটেনাই কাউন্টির কোউর ডি’আলেন শহরের পার্শ্ববর্তী ক্যানফিল্ড মাউন্টেন এলাকায়। সেখানকার শেরিফ রবার্ট নরিস জানান, একজন সন্দেহভাজন বন্দুকধারী উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রাইফেল দিয়ে অতর্কিতে গুলি ছুড়তে থাকেন ফায়ার সার্ভিস টিমের দিকে। তিনি বলেন, ‘‘এই হামলাকারীকে যদি দ্রুত নিষ্ক্রিয় করা না যায়, তাহলে আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে অভিযান চালাতে হতে পারে।’’
শেরিফ আরও বলেন, ঘটনাস্থলে একাধিক দিক থেকে গুলি ছোড়ার শব্দ পাওয়া গেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, একাধিক ব্যক্তি এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তবে এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ঘটনাটি তদন্ত করছে স্থানীয় পুলিশ বিভাগ এবং এফবিআই।
রবার্ট নরিস এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যানফিল্ড মাউন্টেন এলাকার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সবাইকে অনুরোধ করব যেন তারা এই এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন এবং প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে না বের হন।’’
সন্দেহভাজন বন্দুকধারী এখনো পলাতক রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। তার উদ্দেশ্য কী ছিল এবং কেনইবা হঠাৎ ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করলেন, তা এখনো অস্পষ্ট।
আইডাহোর গভর্নর ব্র্যাড লিটল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’–এ এক পোস্টে বলেন, ‘‘ফায়ার সার্ভিসের একাধিক বীর কর্মী আজ সন্দেহভাজন বন্দুকধারীর হামলার শিকার হয়েছেন। আমরা শোকাহত। এই সহিংসতার নিন্দা জানাই এবং তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দেব।’’
নিহত ও আহতদের পরিচয় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
বিবিসি জানিয়েছে, সন্দেহভাজন এক বন্দুকধারীকে খুঁজছে পুলিশ। তবে হামলায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ রয়েছে। ইতোমধ্যে ওই পাহাড়ি এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ও স্পেশাল ট্যাকটিক্যাল টিম।
সিএনএনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী অস্ত্রোপচারের পর স্থিতিশীল রয়েছেন, তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। দ্রুততার সঙ্গে মেডিকেল রেসপন্স না থাকলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত।
এ ঘটনার পর পুরো অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পাহাড়ি অঞ্চল থেকে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন। পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে এবং যেকোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি বাহিনী।
এই বর্বর ঘটনার নেপথ্যে যদি কোনো সংগঠিত ষড়যন্ত্র থাকে, তাহলে তা উদঘাটনে তৎপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। ফেডারেল স্তরে তদন্ত চালানোর ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।