close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল, জামায়াত নেতা আজহার ‘বেকসুর’ খালাস..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম অবশেষে বেকসুর খালাস পেলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাতিল হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বহুল আলোচিত রায়। মামলার আর কোনো বাধা না থাকল..

এক যুগের বেশি সময় ধরে চলা বিচারিক প্রক্রিয়ার অবসান ঘটিয়ে, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় সম্পূর্ণ খালাস দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত – সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার (তারিখ দিন) সকাল ১০টায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যবিশিষ্ট আপিল বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে। আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে উত্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ যথেষ্ট ছিল না — যার ফলে আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি।

আদালতের পর্যবেক্ষণ

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, "সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনায় আমরা দেখতে পাই যে, মামলার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে সন্দেহ রয়েছে। এক্ষেত্রে একজন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করার আইনগত ভিত্তি নেই। তাই, এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো।"

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ও পটভূমি

২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজহারুল ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, রংপুরে পিস কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করেছিলেন।

তবে শুরু থেকেই আজহারুল ইসলাম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন এবং তার আইনজীবীরা বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল দুর্বল ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আপিলের দীর্ঘ প্রক্রিয়া

২০১৫ সালে তিনি ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এর পর থেকেই মামলা দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে ছিল। ২০২৪ সালে এ মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি শুরু হয়, যা শেষ হয় ২০২৫ সালের শুরুর দিকে।

মুক্তির আদেশ

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, যদি তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকে, তাহলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ফলে এখনই মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

রায় প্রকাশের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজহারুল ইসলামের মুক্তির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিচারিক অবসান ঘটলো।”

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই রায়ের সমালোচনা করেছে। তারা মনে করেন, এই রায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে একটি বড় ধাক্কা।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই রায় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কাজ করা কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, এই সিদ্ধান্ত ‘বিচার ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষার ইঙ্গিত দিলেও’, এটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য একটি কঠিন বার্তা।



যুদ্ধাপরাধের মামলায় এক সময় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাস প্রমাণ করে, বিচারপ্রক্রিয়া কেবল সাজা দেওয়ার মাধ্যম নয়, বরং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ। তবে এই রায় নিয়ে আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে আলোচনা চলতেই থাকবে।

Nenhum comentário encontrado