close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

যশোরে করোনায় আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আবারও যশোরকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রাণ হারিয়েছেন আরও দুই করোনা আক্রান্ত রোগী। শহরের জেনারেল হাসপাতালে আতঙ্ক, আর আইসোলেশনে দিশেহারা রোগীরা।..

যশোরে ফের করোনার মৃত্যুমিছিল। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ইউসুফ আলী (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। এই মৃত্যুর মাধ্যমে চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে যশোর জেলায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুইজনে। একই সময় শহরের জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে আরও তিনজন রোগী ভর্তি রয়েছেন, যাদের উপসর্গ সন্দেহজনক।

মৃত ইউসুফ আলীর বাড়ি মণিরামপুর উপজেলার মাহমুদকাটি গ্রামে। তিনি গোলাম মোস্তফার ছেলে। শ্বাসকষ্ট ও কিডনির জটিলতা নিয়ে গত ১৩ জুন যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। প্রথমে তাঁকে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়, কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে পরদিন আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. বজলুর রশিদ টুলু নিশ্চিত করেন, ইউসুফ আলীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যাচ্ছিল। ফলে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁর পরিবার দুপুরে ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করায়। সন্ধ্যায় রিপোর্ট আসে ‘পজিটিভ’ — তবে সেই ফলাফল পাওয়ার আগেই রোগীর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগেই রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এতে স্পষ্ট হয়, করোনা আক্রান্ত হলেও যথাসময়ে চিকিৎসার সুযোগ পাননি ইউসুফ আলী। ফলস্বরূপ, শুরুই করা গেল না করোনা চিকিৎসা — শেষ হলো জীবনের লড়াই।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়েত বলেন, “আইসিইউতে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কাছ থেকে ফোনে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ইউসুফ আলী করোনা পজিটিভ ছিলেন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।”

এর আগে বুধবার ভোরেই একই হাসপাতালে মারা যান আরেক করোনা আক্রান্ত রোগী — শেখ আমির হোসেন পারুল (৬৮)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, প্রতিদিনই উপসর্গ নিয়ে আসছেন একাধিক রোগী, যাদের অনেকেই ভর্তির আগেই অক্সিজেন সংকটে ভুগছেন। আইসোলেশন ওয়ার্ড ও আইসিইউ ইউনিটে চাপ বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, এটি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের নতুন সংক্রমণ চক্রের ইঙ্গিত।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন যে, উপসর্গ দেখা দিলেই অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া উচিত। বিলম্বে রিপোর্ট পাওয়ার কারণে অনেক সময় রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার আগেই মারাত্মক অবস্থা তৈরি হয়।

এদিকে শহরের সাধারণ মানুষদের মধ্যে ফের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মানায় উদাসীন হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এই দুই মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে ফের আশঙ্কা জেগেছে। স্থানীয় প্রশাসনও নতুন করে সচেতনতামূলক অভিযান শুরু করার চিন্তা করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, সংক্রমণের হার হঠাৎ করেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। সংক্রমণ রোধে সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, মাস্ক ব্যবহার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং দ্রুত টেস্ট করানো ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “করোনা এখনো শেষ হয়নি — বরং রূপ বদলে বারবার ফিরে আসছে। আমরা যদি আবার উদাসীন হই, তবে আরও বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারি।

לא נמצאו הערות