জাতির ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে কেবল বিএনপির সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়— এমন মন্তব্য করে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফারুকী এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন,
"জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অনুষ্ঠান হবে, আর সেখানে শুধুই বিএনপির লোকজন কথা বলবে— এটি যেন না হয়, শুরু থেকেই আমরা সেটি চেয়েছি। ইতিহাসকে একটি দলের মধ্যে আবদ্ধ করলে, সেটি ইতিহাসের প্রতি অবিচার হয়। জিয়াউর রহমান শুধু বিএনপির একক সম্পদ নন, তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।"
তিনি আরও বলেন,
"আওয়ামী লীগও অতীতে এমন ভুল করেছে— তাদের ইতিহাস তারা এককভাবে নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছে। আমি আশা করি, বিএনপি সেই একই ভুল করবে না। জিয়াউর রহমানকে জাতির সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই এখন সময়ের দাবি।"
সংস্কৃতি ও সকল জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির কথা বললেন ফারুকী
বক্তব্যের একপর্যায়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, সরকার হিসেবে তারা অল্প সময়ের জন্য দায়িত্বে আছেন, তাই অনেক বড় পরিবর্তন একসাথে আনা সম্ভব নয়। তবে সংস্কৃতি খাতে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
"নববর্ষ শুধু বাঙালিদের উৎসব নয়। চাকমা, মারমা, গারো সহ অনেক জাতিগোষ্ঠী নিজেদের সংস্কৃতিকে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন করে। আমরা চেষ্টা করেছি, সবার সংস্কৃতিকে একসাথে উদযাপনের একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরির।"
তিনি জানান, এবারের বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে ঢাকা সহ দেশের পাঁচটি স্থানে সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উপস্থাপনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা
এই স্মরণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মাননীয় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন তার বক্তব্যে বলেন,
"জিয়াউর রহমান শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি একটি চেতনার নাম। বর্তমান সময়ে তার রাষ্ট্রীয় দর্শন ও নেতৃত্বের গুণাবলী আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।"
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন,
"রাষ্ট্র পরিচালনায় জিয়াউর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। তার জীবন, নেতৃত্ব, এবং আত্মত্যাগ থেকে আমাদের সকলের শেখার আছে।"
স্মরণসভাটি ছিল একটি বিরল মঞ্চ যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জাতির ঐক্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বক্তব্য রাজনৈতিক সীমার বাইরে গিয়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান হিসেবে অনেকে দেখছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং এটি ইতিহাসের মালিকানা নিয়ে একটি গভীর বার্তা— “ইতিহাস কারও একক সম্পত্তি নয়, এটি জাতির যৌথ উত্তরাধিকার”।