জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর মামলা: তদন্তে পিবিআই
জাতীয় রাজনীতিতে ফের উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা) অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঘিরে। মনোনয়ন বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং ডাকাতির অভিযোগে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, তার স্ত্রী শেরিফা কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম মিয়া সোমবার (২০ মে) মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী জাহিদ হাসান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
মামলার আবেদন ও আদালতের নির্দেশনা
মামলাটি দায়ের করেছেন জাতীয় পার্টির সাবেক সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নাজমিন সুলতানা তুলি। তিনি গত ১৮ মে ঢাকার আদালতে আবেদন করেন। আদালত ওই দিন তার জবানবন্দি গ্রহণ করে ২৬ মে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। পরে বিচারক তদন্তের নির্দেশ দেন পিবিআইকে।
কী অভিযোগ করেছেন বাদী?
মামলার আবেদনে নাজমিন সুলতানা অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের কথিত ‘ডামি নির্বাচনে’ মনোনয়ন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এই দাবিটি করা হয় সরাসরি এসএমএস বা মেসেজের মাধ্যমে। অভিযোগে আরও বলা হয়, এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি জি এম কাদেরের মদদ ছিল।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এক বৈঠকে প্রতিবাদ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং দলের ভেতরে বিভাজন বাড়ে। এর জেরে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটায়, ৪০-৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তার বাসায় হামলা চালায়।
বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও হুমকি
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বাদীর বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর লুটপাট চালিয়ে নিয়ে যায় ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, একটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও অন্যান্য মালামাল। এতে শুধু আর্থিক ক্ষতিই হয়নি, বরং বাদী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
পরে তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ করে সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
আর কারা রয়েছেন মামলায়?
মামলার বাকি আসামিরা হলেন—
-
রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব
-
হারুন অর রশিদ, ডিবি পুলিশের সাবেক প্রধান
-
নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া, জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য
-
আকরাম, উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক ডিসি
-
নাজমুল, উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক এডিসি
-
পবিত্র সরকার, বিমানবন্দর জোনাল টিমের এসআই
-
সাইদুল ইসলাম, জাপার ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য
পিবিআইয়ের তদন্তে কী উঠে আসবে?
এখন সবার নজর পিবিআইয়ের তদন্তে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম পুরনো দল জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা এমন জঘন্য অভিযোগের মুখে পড়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—এই অভিযোগ কতটা সত্য? পিবিআই তদন্তের মাধ্যমে কী প্রকৃত সত্য উদঘাটন করতে পারবে?
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ইতোমধ্যেই মামলার প্রাথমিক নথি গ্রহণ করেছে এবং অনুসন্ধান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এ মামলার অগ্রগতি আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।