যেভাবে ট্রাম্পের ক্ষমতা আরও বাড়লো

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আরও বিস্তৃত হলো। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধের পথে ট্রাম্প পেলেন জয়, যা ভবিষ্যতের আইনি ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।..

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায়ে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ আটকে দেওয়ার ক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুল আলোচিত 'জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের' উদ্যোগ আবারও কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এটি ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এক নতুন জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যেই তিনি একে ‘সংবিধানের জন্য বিজয়’ বলে অভিহিত করেছেন।

বহুদিন ধরেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের নাগরিকত্ব প্রদানে বিরোধিতা করে আসছিলেন। তার দাবি, এই পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতিকে দুর্বল করছে। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি এই নাগরিকত্ব বন্ধে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, যা বিভিন্ন ফেডারেল আদালত দ্বারা আটকে দেওয়া হয়েছিল। সেই আদেশই এখন আবারও আলোচনায় এসেছে সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ রায়ের কারণে।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এখন থেকে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ যদি কেউ চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে তা আদালতের দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে। আগে যেভাবে ফেডারেল বিচারকরা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত সঙ্গে সঙ্গে আটকে দিতে পারতেন, এখন তা আর সহজ হবে না। এর মানে, ট্রাম্পের মতো নেতারা ভবিষ্যতে নির্বিঘ্নে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবেন—অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায়ের মাধ্যমে ফেডারেল বিচারব্যবস্থা এবং নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন এসেছে। নটরডেম ল স্কুলের অধ্যাপক স্যামুয়েল ব্রে বলেছেন, “এই রায় মৌলিকভাবে আদালত ও প্রেসিডেন্টের সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে।”

তবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও হয়েছে। বিচারক সোনিয়া সোটোমেয়র লিখেছেন, “এই রায় সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার এক প্রকার অনুমতি। প্রেসিডেন্ট এখন কলমের এক খোঁচায় সংবিধানকে অবজ্ঞা করতে পারবেন।” তিনি আরও বলেন, “আইনের শাসন কাউকে উপহার দেওয়া হয় না, এটি রক্ষা করতে হয়।” তার মতে, এই রায় আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য এক ভয়াবহ সংকেত।

শুক্রবারের এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “এটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনের শাসনের জন্য বড় জয়। কিছু ফেডারেল বিচারক আমার প্রশাসনের সিদ্ধান্ত আটকে দিয়ে গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ করছিলেন।” তিনি বলেন, “এই আদেশ সেই হস্তক্ষেপের অবসান ঘটালো।”
অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, “এখন বিচারকরা নির্বাহী আদেশ থামিয়ে দিতে পারবেন না। আমাদের হাতে আরও স্বাধীনতা থাকবে।"

এই রায়ের ফলে, এখন ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আদেশ ৩০ দিনের মধ্যে কার্যকর হতে পারে। তবে এর বিরুদ্ধে এখনও আইনি লড়াই চলবে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই রায়ের প্রভাব শুধু ট্রাম্পের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভবিষ্যতের যেকোনো প্রেসিডেন্ট এখন নির্বাহী আদেশ জারিতে আরও বেশি ক্ষমতা উপভোগ করবেন। ফেডারেল বিচারকরা তাদের বাধা দিতে চাইলে সেটির জন্য দীর্ঘ আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
বিচারক অ্যামি কোনে ব্যারেট বলেন, “ফেডারেল আদালত নীতি নির্ধারণ করে না, তারা কেবল আইনগত বিরোধের সমাধান করে।”
জাস্টিস ব্রেট কাভানফ জানান, “যখন আইনি সমস্যা তৈরি হয়, সুপ্রিম কোর্টই তা নির্ধারণ করবে।”

এই রায়ে একদিকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ছে, অন্যদিকে গণতন্ত্রের ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ‘নির্বাহী শাখা বনাম বিচার বিভাগ’ এই দ্বন্দ্ব এখন আমেরিকার রাজনীতিতে আরও নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত শুধু ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব ইস্যুই নয়, পুরো আমেরিকান রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। ক্ষমতার এই পুনর্বিন্যাস আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্টদের হাতে কতটা ক্ষমতা দেবে—তা নির্ভর করবে এই আদেশ ঘিরে আসন্ন আইনি লড়াই ও জনমতের ওপর।

Aucun commentaire trouvé