ঢাকার রাজনীতির চৌকাঠে ফের আলোড়ন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতি আসাদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তার দাবি, এই দুই শিবির নেতা একসময় ছিলেন ছাত্রলীগের নিবেদিত কর্মী।
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন দুপুর ৩টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চে ছাত্রদলের মাসব্যাপী ফরম বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
রাকিব বলেন, “আমরা এতদিন যে অভিযোগ করে এসেছি, তা আজ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের হাতে এখন প্রমাণ আছে—জবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি অতীতে ছাত্রলীগ করতেন।”
তিনি আরও বলেন, “এটা শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালীতেই সীমাবদ্ধ নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের শীর্ষ নেতা হিসেবেও যিনি রয়েছেন, তিনি সরাসরি ছাত্রলীগের কমিটিতে পদধারী ছিলেন।
ঘটনার গভীরে গিয়ে রাকিব আরও বলেন, “বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে একটি ভণ্ডামি চলছে। সম্প্রতি বাংলা কলেজে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করেছে, শহীদ পর্যন্ত করেছে। কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ওই সংঘর্ষে ছাত্রদলের হাতে ধরা পড়ে ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতাকে বাঁচাতে ছুটে যান বাংলা কলেজ ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সাকিব।”
“আমরা পরে তদন্ত করে জানতে পারি, সাকিব ছাত্রলীগের সাথেই যুক্ত ছিল। অর্থাৎ ছাত্রশিবিরের পরিচয়ে থেকে ছাত্রলীগের হয়ে কাজ করছিল। এটি ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে চরম বিশ্বাসঘাতকতা,”—জোর গলায় বলেন রাকিব।
রাকিবুল ইসলাম আরও বলেন, “বাংলাদেশে একটি গোপন মহল রয়েছে, যারা ছদ্মবেশে ছাত্ররাজনীতিতে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। যারা প্রতিনিয়ত ছাত্রদলের সমালোচনা করে যাচ্ছে, তাদের উচিত নিজেদের ঘরের খবর নেওয়া। ছাত্রশিবির বা জামায়াতপন্থী নেতাদের শিক্ষাবর্ষ ও রাজনৈতিক ইতিহাস প্রকাশ করা হোক।
তিনি অভিযোগ করেন, “নতুন নতুন ছাত্র সংগঠন গড়ে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন চলছে। ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নামক সংগঠন এখন ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।”
ছাত্রদলের এ কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কাজী জিয়াউদ্দিন বাসেত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দসহ অনেকে। বক্তব্যে ছাত্রদলের নেতারা একে একে বর্তমান সরকারের ‘ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের ছলচাতুরি’ তুলে ধরেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবের এই বক্তব্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন করে ছাত্র রাজনীতির ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ প্রশ্নে বিতর্ক উসকে দেবে। একইসাথে, ছাত্রলীগ-শিবির দ্বন্দ্বের পেছনে থাকা অদৃশ্য যোগসূত্র নিয়েও আলোচনা তীব্র হবে।