close
ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে একদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে অর্থনীতি, ব্যবসা, এবং বিনিয়োগ খাতেও কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তবে এ ঘোষণাকে ঘিরে তৈরি হওয়া প্রতিক্রিয়াগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা স্পষ্টতই দেখতে পাই—সমাজের বিভিন্ন স্তরে এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
ড. ইউনূস তার ভাষণে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। এই ঘোষণায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা পরিষ্কার হলেও এটি কেবল একটি টাইমলাইন, কোনো পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ নয়। তবে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা এটিকে স্বস্তির নিদর্শন হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক প্রস্তুতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনসাধারণের আস্থা অর্জনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা এবং অগ্রাধিকার এখনো অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল অস্থিরতায় ভরা। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার ঘোষণা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে:** ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, এই ঘোষণা বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনবে। বিশেষত আন্তর্জাতিক ক্রেতারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কে জানতে চান।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দৃষ্টিকোণ থেকে:** গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি নির্বাচনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন।
সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে:** নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমা জনমনে স্বস্তি আনলেও এটি সমাজে শান্তি বজায় রাখতে পারবে কিনা তা নির্ভর করবে সরকারের পদক্ষেপের ওপর।
এই ঘোষণার প্রভাব কোথায় পড়বে?
১. অর্থনীতি ও বাজার:
সিপিডির ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এই ঘোষণা বাজারে স্থিরতা আনবে। এটি বিনিয়োগকারীদের পরিকল্পনা তৈরি এবং বাজারে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
খেলাপি ঋণ আদায়:
ব্যাংক খাতে নির্বাচনের আগে কিছু খেলাপি ঋণ আদায় হতে পারে। কারণ, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ঋণ পরিস্থিতি সমন্বয় করার চাপ থাকবে।
মুদ্রাস্ফীতি:
উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা হবে সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরি মনে করেন, নির্বাচন যত কাছাকাছি আসবে, নগদ অর্থের চাহিদা এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে।
২. রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা:
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ মনে করেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি না হলে এই ঘোষণার সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না।
৩. আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ:
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেছেন, এই টাইমলাইন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করবে। তবে একটি অবাধ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত না হলে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব হবে না।
এখন আমাদের করণীয় কী?
১. অর্থনৈতিক দুর্বলতা কাটানো:
নির্বাচনের আগে প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, এবং কর্মসংস্থান তৈরি করতে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে। অর্থনীতির বর্তমান স্থবিরতা কাটানো ছাড়া নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমা অর্থনৈতিক সুফল আনতে পারবে না।
২. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করা:
সরকারকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে।
৩. জনগণের আস্থা অর্জন:
গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সব রাজনৈতিক দলকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে।
ড. ইউনূসের ঘোষিত সময়সীমা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তি আনলেও এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সমাধান নয়। নির্বাচন কেবল একটি প্রক্রিয়া; গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা এবং অর্থনৈতিক শক্তিশালীকরণই দেশের স্থায়ী উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।
তাই, এই সময়সীমাকে কেন্দ্র করে সরকারের কার্যক্রম কতটা কার্যকর হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হলে এই ঘোষণা দীর্ঘমেয়াদে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি