আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন সমমনা ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে এক নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী ময়দানে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও আসন বণ্টন নিয়ে শরিকদের আকাশচুম্বী দাবির কারণে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, জোটে নতুন দল যুক্ত হওয়া এবং শরিকদের অতি-প্রত্যাশার কারণে মোট আসনের চেয়েও দাবিকৃত প্রার্থীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।
বর্তমানে জামায়াতের সঙ্গে জোটে রয়েছে ৮টি সমমনা ইসলামি দল। এছাড়া আরও ২-৩টি দল এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তথ্যমতে, জোটের শরিকরা সম্মিলিতভাবে ৩৪৮টি আসনের দাবি তুলেছে, যেখানে জাতীয় সংসদের মোট আসন সংখ্যা মাত্র ৩০০। এর মধ্যে প্রধান শরিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একাই ১২০টি আসনের দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টিসহ বাকি ছয়টি দল মিলে আরও ১০০টি আসনের তালিকা জমা দিয়েছে। এই ভারসাম্যহীন দাবির মুখে জামায়াত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও মাঠ জরিপকেই মনোনয়নের প্রধান ভিত্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
মূল প্রতিবেদন (দ্বিতীয় অংশ): জোটের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যু এবং জামায়াতের আমিরের বিদেশ সফরসহ লিয়াজোঁ কমিটির নেতাদের ব্যস্ততার কারণে বৈঠকগুলো সময়মতো অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। তবে আগামী দু-একদিনের মধ্যেই এই জট খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এইচএম হামিদুর রহমান আযাদ জানিয়েছেন, দলগুলোর এই দাবি মূলত তাদের সাংগঠনিক প্রত্যাশার জায়গা থেকে। তবে নির্বাচনের বাস্তবতায় যেখানে যার জয়ের সম্ভাবনা বেশি, সেখানেই তাকে প্রার্থী করা হবে।
জামায়াত এই আসন সমঝোতায় সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা পোষণ করলেও শরিকদের অতি-দাবি বিষয়টিকে কিছুটা জটিল করে তুলেছে। জামায়াতের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা অনেক আগে থেকেই ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রস্তুতি নিয়েছিল। এখন জোটের স্বার্থে তাদের নিজেদের অনেক শক্ত প্রার্থীকে সরিয়ে দিয়ে শরিকদের জায়গা করে দিতে হবে। বিশেষ করে ৮টি দলের শীর্ষ নেতাদের সংসদ সদস্য হিসেবে জয়ী করে আনাকে জামায়াত একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেষ পর্যন্ত জামায়াত কতটি আসনে ছাড় দেয় এবং শরিকরা তাদের দাবি কতটা কমিয়ে আনে, তার ওপরই নির্ভর করছে এই ইসলামি জোটের ভবিষ্যৎ ঐক্য।



















