ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নিলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে : ইরান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, তাহলে ইরান এমন জবাব দেবে যা ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে— এমন হুঁশিয়ারি দিল তেহরান। ট্রাম্পের উস্কানিমূলক পোস্ট ও মার্কিন যুদ্ধবিমান মোতায়েন..

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যে এবার সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিল তেহরান। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে— ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নিলে তার জবাব ‘দাঁতভাঙা’ হবে। এই কড়া বার্তাটি দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত আলি বাহরেইনি।

বুধবার জেনেভায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে আলি বাহরেইনি বলেন, “আমরা ইসরায়েলের কার্যক্রমের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে সহানুভূতিশীল কিংবা সরাসরি জড়িত হিসেবে দেখছি। যদি তারা আগ্রাসনের পথে হাঁটে, তবে আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা ও প্রতিশোধের অধিকার প্রয়োগ করবো।’

তিনি আরও বলেন, “যেভাবে আমরা ইসরায়েলের প্রতি সামরিক জবাব দিয়েছি, একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেও জবাব দেওয়া হবে। আমাদের সেনাবাহিনী সঠিক, সমানুপাতিক ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখাতে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত।

ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষে এখনো সরাসরি কোনো সামরিক পদক্ষেপ না নিলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ‘টাইমস অব ইসরায়েল’-এর বরাতে জানা যায়, তারা ইসরায়েলের আকাশে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সহযোগিতা করছে।

এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক মার্কিন যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওয়াশিংটনের তিনজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু আক্রমণাত্মক সামরিক সরঞ্জাম মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাচ্ছে, যার মধ্যে ড্রোন, প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজও রয়েছে।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের পর। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ স্যোশাল’-এ এক পোস্টে ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের’ আহ্বান জানান, যা সরাসরি উস্কানিমূলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এর জবাবে আলি বাহরেইনি বলেন, “ট্রাম্পের বক্তব্য চরমপন্থী, ভিত্তিহীন এবং শত্রুতামূলক। এই বক্তব্য আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। বরং আমরা সতর্কভাবে মার্কিন বক্তব্য ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সেটি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

ইরান আবারও জানিয়ে দিয়েছে, তারা দেশের নিরাপত্তা, জনগণ এবং ভূখণ্ড রক্ষায় কোনো রকম দ্বিধা করবে না। বাহরেইনি বলেন, “আমরা কঠোর, শক্তিশালী এবং দায়িত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দেখাব। ইসরায়েলের আক্রমণের জবাবে আমরা আরও কঠিন প্রতিশোধ নেব।

ইরানের এই হুমকি শুধু একটি রাজনৈতিক বার্তা নয়— বরং এটি একটি স্পষ্ট সামরিক ঘোষণা। মধ্যপ্রাচ্যে এমনিতেই উত্তেজনার পারদ চরমে, তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন মূলক পদক্ষেপ অঞ্চলটিকে বড় ধরণের সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি যুক্ত হয়, তবে এটি শুধু ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকবে না— বরং এটি একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ, এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিতও দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এখন তাকিয়ে আছেন জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার এই পর্যায় কতটা বিস্ফোরক হতে পারে, তার পূর্বাভাস দিচ্ছেন অনেক সামরিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক।

ইরান এখন আর শুধু কথায় নয়, কাজে প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য প্রস্তুত বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের পাশে সামরিকভাবে দাঁড়ায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ ও ভূমি রক্তাক্ত হয়ে উঠতে পারে — যার দায় শুধু তেলআবিব নয়, ওয়াশিংটনকেও নিতে হবে।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি