মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি ও ইসরায়েলের সঙ্গে টানা সংঘাতের মধ্যে ইরান এবার নজিরবিহীন এক প্রস্তাব সামনে এনেছে। দেশটির উচ্চপদস্থ নেতা ও বিপ্লবী গার্ডের সাবেক প্রধান মহসেন রেজাই জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত ও অস্থিরতা মোকাবেলায় একটি ‘ইসলামিক সেনাবাহিনী’ গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই প্রস্তাবে ইরান সৌদি আরব, পাকিস্তান এবং তুরস্ককে একসাথে সামরিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
মহসেন রেজাই বলেন, “ইসলামি বিশ্ব আজ বিভক্ত। আমাদের ঐক্যবদ্ধ না হলে প্রতিপক্ষরা আমাদের আরও দুর্বল করবে। একটি সম্মিলিত ইসলামিক আর্মি গঠন করলে তা শুধু প্রতিরক্ষায় নয়, বরং মুসলিম বিশ্বের সার্বিক নিরাপত্তায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘর্ষে বড় বড় শক্তিধর দেশগুলো বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন দিয়ে এই সংঘাতকে আরও দীর্ঘায়িত করেছে। কিন্তু মুসলিম দেশগুলো যদি নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলে, তবে এই বৈদেশিক হস্তক্ষেপ ও সহিংসতা হ্রাস পেতে পারে।
ইরান শুধু প্রস্তাব দিয়েই থেমে থাকেনি। একই সময়ের মধ্যে দেশটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। সর্বশেষ সোমবার ভোরে ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী হাইফায় আঘাত হানে।
হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে রয়েছে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বসতবাড়ি, যার অনেকগুলোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেখা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল কূটনৈতিকভাবে যেমন চাপে পড়েছে, তেমনি সামরিক প্রস্তুতিও বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। দেশটি এই মুহূর্তে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ সর্বোচ্চ সতর্কতায় চালু রেখেছে।
এই উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে ১৩ জুন ভোরে, যখন ইসরায়েল তেহরানসহ ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালায়। ওই হামলার প্রতিশোধে ইরানও তাৎক্ষণিক পাল্টা আক্রমণে নামে।
এরপর থেকে দুই দেশ দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষের মৃত্যু এবং আরও বহু মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশ্লেষকরা এটিকে একটি ‘আংশিক যুদ্ধ পরিস্থিতি’ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসলামিক সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন করে ভারসাম্য তৈরি হবে। ঐতিহাসিকভাবে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও এই প্রস্তাব একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—সৌদি আরব, তুরস্ক ও পাকিস্তান কি সত্যিই ইরানের এমন সেনা জোটে অংশ নেবে?
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই প্রস্তাবকে গভীর উদ্বেগের চোখে দেখছে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে এই বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে এবং সম্ভাব্য যৌথ মুসলিম সামরিক শক্তিকে “নতুন চ্যালেঞ্জ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
ইরানের এই উদ্যোগ কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের রাজনীতি ও কূটনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। এটি বাস্তবে রূপ নিলে বহু পুরোনো দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার ভারসাম্য ও জোটবদ্ধতা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
তবে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথে অনেক বাধা—রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, বিশ্বশক্তিগুলোর চাপ, এবং ভেতরের মতপার্থক্য।
এখন দেখার বিষয়, সৌদি, পাকিস্তান ও তুরস্ক এই প্রস্তাবে সাড়া দেয় কি না।



















