রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক বিস্ফোরক মন্তব্যে জানান দিয়েছেন, ইরানের ভূখণ্ডে রাশিয়ার ৬০০ এরও বেশি বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন এবং তারা সেখান থেকে ফিরছেন না। এই ঘোষণায় স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে— মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে রক্ষা করতে রাশিয়া সরাসরি ভূমিকা নিতে প্রস্তুত।
সেন্ট পিটার্সবার্গে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে (SPIEF) এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন জানান, “আমাদের প্রায় ২৫০ জন রুশ বিশেষজ্ঞ বুশেহার পারমাণবিক স্থাপনায় কাজ করছেন। অন্যান্য প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ীসহ এই সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। আমরা সেখানে অবস্থান করছি এবং আমাদের কেউ সরে যাচ্ছে না। এটিই কি সমর্থন নয়?”
এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন তেহরানে ইসরায়েলি হামলার শঙ্কা বাড়ছে এবং অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। পুতিনের এমন স্পষ্ট অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার সক্রিয় ভূমিকাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
পুতিন আরও জানান, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরে রাশিয়া একটি প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইরানের ইউরেনিয়াম যেন কেবল শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়, তা রাশিয়া নিশ্চিত করতে চায়। প্রয়োজনে রাশিয়া পুরো পরমাণু প্রকল্প তত্ত্বাবধানে নিতে প্রস্তুত, যদি ইরান তা চায়। তিনি বলেন, “আমরা ইরানের বন্ধু এবং ভালো সম্পর্কের ভিত্তিতে এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছি। তবে সিদ্ধান্ত ইরানের।”
পুতিন বলেন, “ইসরায়েলের উদ্বেগের বিষয়টিও আমরা বুঝি। আমি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, বুশেহার পরমাণু চুল্লির এলাকায় হামলা করা হবে না।”
এই মন্তব্য রাশিয়ার একধরনের কূটনৈতিক ভারসাম্যের প্রতিফলন— একদিকে ইরানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অন্যদিকে ইসরায়েলের উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা।
পুতিন আরো বলেন, “ইরানের নিরাপত্তা ও ইসরায়েলের উদ্বেগ— দুই পক্ষের বিষয়ই গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের সুযোগ থাকা উচিত, যেন কেউ আতঙ্কিত না হয়।
পুতিন জানান, বুশেহার শহরে দুটি নতুন পরমাণু চুল্লি তৈরি করা হচ্ছে এবং এই প্রকল্পে দায়িত্বপ্রাপ্তরা রাশিয়ার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী। তিনি বলেন, “আমরা কেবল প্রযুক্তি দিচ্ছি না, ইরানের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার অংশীদার হিসেবেও কাজ করছি।”
তিনি এটাও উল্লেখ করেন, “রাশিয়া ও ইরান জানুয়ারিতে একটি চুক্তি করেছে। তবে সেটিতে অস্ত্র সহায়তার বিষয়টি নেই এবং ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্রের অনুরোধ করেনি।
পুতিন বলেন, “ইরানে একটি জটিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু জনগণ নেতৃত্বের পাশে রয়েছে। এর অর্থ, ইরান রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ এবং সচেতন।
আলোচনার দরজা সবসময় খোলা রাখা উচিত। কেবল শক্তি দিয়ে নয়, সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা জরুরি। আমাদের উচিত দুই পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় সমাধানে পৌঁছানো।
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের প্রসঙ্গে পুতিন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “তিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তুরস্কের প্রচেষ্টা প্রশংসার যোগ্য।
পুতিনের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট— রাশিয়া কেবল ইরানের পারমাণবিক উন্নয়নে সহযোগিতা করছে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যে নিজের শক্তিশালী অবস্থান তৈরির কৌশলগত চেষ্টা করছে। ইরানকে অস্ত্র না দিলেও প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও কূটনীতি দিয়ে ঘিরে ফেলছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের উদ্বেগকেও গুরুত্ব দিয়ে, একধরনের ‘জটিল ভারসাম্য’ তৈরি করতে চাইছে মস্কো।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে— রাশিয়া-ইরান জোট কি নতুন কোনো ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করতে যাচ্ছে?