close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইরানের পর এবার তুরস্ক? ইসরায়েলের নিশানা ঘিরে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানে ভয়াবহ হামলার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠছে—পরবর্তী লক্ষ্য কি তুরস্ক? নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক বক্তব্য, তুরস্কের কূটনৈতিক প্রস্তুতি এবং সামরিক অগ্রগতিতে মিলছে বিস্ফোরক ইঙ্গিত। বিশ্লেষকরা বলছেন—..

গত শুক্রবার ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে ইসরায়েল। নিহত হয়েছেন শতাধিক সাধারণ মানুষসহ গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তা। কিন্তু এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সেটিই এখন বিশ্ব কূটনীতিকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু: “তুরস্ক কি ইসরায়েলের পরবর্তী নিশানা?”

হামলার আগের দিন, ইসরায়েলের পার্লামেন্টে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইকে স্বাগত জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন,-অটোমান সাম্রাজ্য আর কখনো ফিরে আসবে না, যদিও অনেকে ভিন্নমত পোষণ করে।

এই কথাগুলো সরাসরি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং তার ‘নব্য অটোমানবাদী’ উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। আঙ্কারাও এই মন্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র হামলার আগে যেসব মিত্রদের আগাম তথ্য দিয়েছিল, তুরস্ক তাদের মধ্যে ছিল। তুরস্ক গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী আগে থেকেই সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল হিজবুল্লাহ নেতাকে হত্যা করলে আঙ্কারার কর্মকর্তারা ধারণা করেই রেখেছিলেন, বড় কোনো সংঘাত আসন্ন।

তাদের বিকল্প প্রস্তুতিতে রয়েছে—

  • শরণার্থী ঢেউ সামলানোর পরিকল্পনা

  • কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (PKK) সঙ্গে আলাপ

  • সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার

তুরস্কের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা দেবলেত বাহচেলি স্পষ্টভাবে বলেন,-ইরানের ওপর হামলা আসলে ইসরায়েলের বৃহত্তর কৌশলের অংশ। মূল লক্ষ্য হচ্ছে তুরস্ককে ঘিরে ফেলা এবং তার আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঠেকানো।

তার মতে, ইসরায়েল আনাতোলিয়াকে ঘিরে ফেলতে চায় যাতে মধ্যপ্রাচ্যে একচ্ছত্র প্রভাব রাখতে পারে।

তুরস্কই ছিল প্রথম মুসলিম দেশ যারা ১৯৪৯ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। ৯০’র দশকে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতাও ছিল। তবে এরদোয়ানের ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি একেবারেই বদলে যায়।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে বারবার মুখোমুখি হয় দুই দেশ। সিরিয়ায় রাডার বসানো নিয়ে বিরোধ এতটাই গভীর হয়ে উঠেছিল যে ইসরায়েল সাফ জানিয়ে দেয়—তাদের আকাশে তুরস্কের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চলবে না।

গত এপ্রিলে তুরস্ক ও ইসরায়েল নিজেদের মধ্যে একটি হটলাইন চালু করে, যাতে সংঘর্ষ এড়ানো যায়।
তুরস্ক ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে এমনভাবে কূটনৈতিক অবস্থান নেয় যাতে সিরিয়ায় সংঘাত হলেও তা সরাসরি তুরস্কের সঙ্গে যুক্ত না হয়। কিন্তু পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে “নীরবতা মানে দুর্বলতা” বলেই মনে করছেন অনেকে।

ইসরায়েলের প্রথম হামলার রাতেই তুরস্কের রাডারে ধরা পড়ে ইসরায়েলি F-35 বিমান। তৎক্ষণাৎ তুর্কি এফ-১৬ উড়াল দেয় সতর্কবার্তা দিতে। এমনকি গুঞ্জন রয়েছে, ইসরায়েলি বিমান তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘনও করেছিল—যদিও তারা দ্রুত সরে যায়।

এই ঘটনার মধ্যেই তুরস্কের জনগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। অনেকেই বলছেন—আজ ইরান, কাল তুরস্ক?

যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে না। তবু ইসরায়েল একতরফাভাবে অভিযান চালিয়ে পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে। তুরস্কের চোখে এটা শুধু “অপ্রয়োজনীয়” নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় বড় হুমকি।

সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর আঘাতের মাধ্যমে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের নতুন প্রধান শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে তুরস্কই এখন একমাত্র “ক্ষমতাশালী প্রতিপক্ষ” বলে মনে করে ইসরায়েলি গোয়েন্দা মহল।

বিশ্লেষকদের মতে, তুরস্ক আপাতত সামরিক সংঘাতে না জড়ালেও আকাশ প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা সক্ষমতা ও কূটনৈতিক মিত্রতায় সক্রিয়ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করছে।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এখন কেবল দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নয়, এটি একটি আঞ্চলিক উত্তেজনার রূপ নিয়েছে। তুরস্ক যতই যুদ্ধ এড়াতে চাইুক, ইসরায়েলের কৌশল, সাম্প্রতিক হামলা এবং পশ্চিমা সমর্থন দেখে অনুমান করা যায়, তুরস্কও আর নিরাপদ নয়।

আগামী দিনগুলোতে যদি কূটনৈতিক সমাধান না আসে, তবে হয়তো ইসরায়েল-তুরস্ক সামরিক মুখোমুখি হওয়াও সময়ের ব্যাপার।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator