close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে ‘অবিনশ্বর’ আমেরিকান জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত! ট্রাম্প ও ইসরায়েলকে রীতিমতো হতবাক করে দিল তেহরান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানের নিখুঁত পাল্টা আঘাতে কেঁপে উঠেছে ইসরায়েল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। আয়রন ডোম ভেদ করে মার্কিন যুদ্ধজাহাজে আঘাত, স্টিলথ জেট ধ্বংসের খবর—সব মিলে বিপাকে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রশ্ন উঠেছে—যুক্তরাষ্ট্র কি ..

মধ্যপ্রাচ্য আবারো উত্তপ্ত। তবে এবার দৃশ্যপটে নতুন মোড়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ইরান, আর এই ধাক্কা এসেছে ইসরায়েলের গর্ব ‘আয়রন ডোম’ সিস্টেমকে ভেদ করেই।

ইসরায়েল, যাকে যুক্তরাষ্ট্র ‘মধ্যপ্রাচ্যের অবিনশ্বর জাহাজ’ বলে আখ্যায়িত করে, সম্প্রতি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের শিকার হয়েছে। এতদিন পশ্চিমা বিশ্ব ধারণা করতো, ইসরায়েল এই অঞ্চলে নিরাপদ ও অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু ইরান তাদের নিখুঁত প্রতিক্রিয়ায় প্রমাণ করে দিল—পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইসরায়েলের বৃহস্পতিবার রাতের হামলার জবাবে ইরান যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে বিস্মিত শুধু পশ্চিমা নেতারাই নয়, হতবাক হয়েছেন সামরিক বিশ্লেষকেরাও।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই গর্ব করে বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সেরা যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ করে। তার দাবি, এই আধুনিক সরঞ্জামগুলো দিয়ে ইসরায়েলকে অজেয় বানানো হয়েছে। অথচ ইরানের সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি দুই বা তিনটি এফ-৩৫ স্টিলথ জেট ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়েছে। যদিও এই তথ্যের সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি, তবুও এমন একটি জেট ধ্বংস হওয়ার দাবি পশ্চিমা প্রযুক্তির মর্যাদায় বড় ধাক্কা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপমানজনক। এই ঘটনায় বিশ্ব অস্ত্রবাজারে বড় প্রভাব পড়তে পারে।

দীর্ঘদিন নিষেধাজ্ঞার শিকার ইরান নিজেকে রক্ষায় যে শক্তি অর্জন করেছে, তা দেখে চমকে উঠেছে পশ্চিমারা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরান এখন শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, বরং একটি আঞ্চলিক প্রতিরোধের প্রতীক। তাদের স্বল্পমূল্যের শাহেদ-১৩৬ ড্রোন সহজেই মার্কিন ব্যয়বহুল প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র এড়িয়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারে।

ম্যাকগ্রেগরের ভাষায়, ‘‘ইরান একটার পর একটা ২০ হাজার ডলারের ড্রোন পাঠাবে, আর আমেরিকা প্রতিটি থামাতে ৪০ লাখ ডলারের মিসাইল ছোড়াবে। এক সময় দেখা যাবে আমেরিকার গোলাবারুদ শেষ, আর কফিনে করে ফিরছে সেনারা।

ইসরায়েলের সীমালঙ্ঘনের ইতিহাস নতুন নয়। ১৯৪৬ সালে জেরুজালেমের কিং ডেভিড হোটেলে ব্রিটিশ সেনাদের হত্যা, ১৯৬৭ সালে ইউএসএস লিবার্টি জাহাজে হামলা এবং গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ—সবই ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করে পার পেয়ে গেছে। এইসব ঘটনার পটভূমিতে নেতানিয়াহুর দাবি—যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে—এটি এখন পশ্চিমাদের জন্যও অস্বস্তিকর।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর জন্য ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ইরান ১৯৮৩ সালে বৈরুতে মার্কিন সৈন্য হত্যা করেছিল এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।’’

তবে বিশ্লেষকেরা এই যুক্তিকে পাত্তা না দিয়ে বরং ট্রাম্পকে সাবধান করেছেন। ওয়াশিংটন ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ এখন ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার।

সাবেক সামরিক কর্মকর্তা কর্নেল ডগলাস ম্যাকগ্রেগরের মন্তব্য, ‘‘৭ কোটি ৭০ লাখ আমেরিকান ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন যুদ্ধ বন্ধ করার আশায়, যুদ্ধ শুরুর জন্য নয়।

ম্যাকগ্রেগরের সতর্কতা আরও ভয়াবহ। তিনি বলেন, ‘‘ইসরায়েল যদি ইরানের খার্গ দ্বীপে হামলা চালায়—যেখান থেকে ইরানের ৯০ শতাংশ তেল রপ্তানি হয়—তাহলে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে।’’ এতে বিশ্ব তেল সরবরাহের ২০ শতাংশ বন্ধ হয়ে যাবে।

ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হবে, ট্রাকচালকেরা খাবার বা ওষুধ পরিবহন করতে পারবেন না। শুরু হবে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি। অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।

ম্যাকগ্রেগরের সরাসরি প্রশ্ন, ‘‘এই ভয়াবহ পরিস্থিতির দায় আমেরিকার সাধারণ মানুষ কেন নেবে? কেবল ইসরায়েলের ব্যক্তিগত যুদ্ধের দায়ে কেন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক সংকটের পথে যাবে?’’

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা এবার হয়তো পশ্চিমাদের চিরচেনা শক্তির গর্ব ভেঙে দিতে পারে। এখন সময় ট্রাম্পের সামনে—তিনি কি নেতানিয়াহুর শেষ চাল খেলবেন, নাকি ভ্লাদিমির পুতিনের কূটনৈতিক সমাধানের পথ ধরবেন?

এই ঘটনাপ্রবাহ এক নতুন ইতিহাসের দিকচিহ্ন হতে পারে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—সে কি মধ্যপ্রাচ্যের আগুনে আরেকবার জড়িয়ে পড়বে, নাকি বিশ্বের সামনে এক শান্তিপূর্ণ কূটনীতিক ভাবমূর্তি গড়ে তুলবে।

Hiçbir yorum bulunamadı