**ইসরাইল—যুক্তরাষ্ট্রের 'অঘোষিত সামরিক ঘাঁটি'**
ইসরাইল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র নয়, বরং বলা যায় একটি 'অঘোষিত সামরিক ঘাঁটি'। মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই রাষ্ট্রটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সহজেই গোটা অঞ্চলে নজরদারি চালাতে পারে।
* যুক্তরাষ্ট্রের বহু সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ হয় সরাসরি ইসরাইলে।
* আমেরিকার স্বার্থ রক্ষায় ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের তথ্য ও নজরদারি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
* আরব দেশগুলো যখন কখনো মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলে, ইসরাইল তখনই হয়ে ওঠে একমাত্র ভরসাস্থল।
**ইরান: চিরশত্রু নয়, কিন্তু চিরশঙ্কার কারণ**
ইরান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এক 'অস্থায়ী শত্রু', কিন্তু স্থায়ীভাবে শঙ্কার উৎস।
* ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরান আমেরিকান আধিপত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
* পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরান যতটা আগায়, ততটাই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার অজুহাত বেড়ে যায়।
এই অবস্থায় ইরান-ইসরাইল সংঘাত আমেরিকার চোখে কেবল দুই রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব নয়, বরং 'নৈতিকতার যুদ্ধে' নিজস্ব পক্ষ নেওয়ার উপায়ও।
**তেল, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক প্রভাব**
মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে তেলের সম্পর্ক গভীর।
* ইরান এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ তেল রপ্তানিকারক দেশ।
* এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য ইরানের দিকে গেলে বিশ্ব তেলের বাজারে প্রভাব পড়বে।
* যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে, যেখানে শক্তির নিয়ন্ত্রণ তার হাতে থাকবে, ইরানের হাতে নয়।
তেল ও গ্যাসের এই রাজনৈতিক খেলা ইসরাইলকে আমেরিকার অপরিহার্য কৌশলগত অংশীদার বানিয়ে রেখেছে।
**ইসরাইলপন্থী লবির দৃঢ় অবস্থান**
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইসরাইলপন্থী লবিগুলোর প্রভাব ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
* ইসরাইলপন্থী সংগঠনগুলো প্রচুর তহবিল দিয়ে মার্কিন রাজনীতিবিদদের প্রভাবিত করে।
* কংগ্রেসে ইসরাইলের স্বার্থরক্ষাকারী প্রতিনিধি ও সিনেটরের সংখ্যা কম নয়।
* প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ইসরাইলপন্থী ভোটারদের মন জয় করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলপ্রীতি শুধু কূটনীতির ব্যাপার নয়, তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিরও অংশ।
**মানবাধিকারের দোহাই, কিন্তু ব্যতিক্রম যখন ইসরাইল**
ইরান মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে যুক্তরাষ্ট্র মুখর হয়—
* কিন্তু ইসরাইল গাজায় হামলা চালালে বা ফিলিস্তিনে নারী-শিশুর মৃত্যু ঘটালেও তা 'আত্মরক্ষা' বলে চিত্রিত হয়।
* একই নীতির দুটি ব্যাখ্যা— একদিকে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে সামরিক সহায়তা।
এই দ্বিমুখী নীতি প্রমাণ করে, মানবাধিকারের ব্যাখ্যা আমেরিকার জন্য নৈতিক প্রশ্ন নয়, বরং কৌশলগত হাতিয়ার।
**শেষ কথা**
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ যতটা ধর্মীয় বা নিরাপত্তা বিষয়ক, তার চেয়েও বেশি এটি ভূরাজনৈতিক আগ্রাসনের নাট্যমঞ্চ।
* যুক্তরাষ্ট্র এখানে এক নেপথ্য পরিচালক, যার ইচ্ছায় দৃশ্যপট বদলায়।
* ইসরাইল তার যোদ্ধা, আর ইরান সেই প্রতিপক্ষ, যাকে শত্রু বানিয়ে রেখে নিজেদের অস্তিত্ব ও আধিপত্যের বৈধতা তুলে ধরা যায়।
এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ইসরাইলের পাশে দাঁড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান নয়, বরং কৌশলগত প্রয়োজন।