close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ইরান–ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলের পাশে যুক্তরাষ্ট্র: স্বার্থ কোথায়? জি আর মুরসালিন..

G R MURSALIN avatar   
G R MURSALIN
মধ্যপ্রাচ্য যেন আর কখনো শান্তির মুখ দেখতে চায় না। একটার পর একটা সংঘাত, সামরিক অভিযান, এবং হাজারো প্রাণহানি। এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক অস্থিরতা নতুন মোড় নিয়েছে ইরান ও ইসরাইলের সরাসরি সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। এম..

**ইসরাইল—যুক্তরাষ্ট্রের 'অঘোষিত সামরিক ঘাঁটি'**

ইসরাইল শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র নয়, বরং বলা যায় একটি 'অঘোষিত সামরিক ঘাঁটি'। মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই রাষ্ট্রটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সহজেই গোটা অঞ্চলে নজরদারি চালাতে পারে।

* যুক্তরাষ্ট্রের বহু সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ হয় সরাসরি ইসরাইলে।
* আমেরিকার স্বার্থ রক্ষায় ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের তথ্য ও নজরদারি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
* আরব দেশগুলো যখন কখনো মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলে, ইসরাইল তখনই হয়ে ওঠে একমাত্র ভরসাস্থল।

 **ইরান: চিরশত্রু নয়, কিন্তু চিরশঙ্কার কারণ**

ইরান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এক 'অস্থায়ী শত্রু', কিন্তু স্থায়ীভাবে শঙ্কার উৎস।

* ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরান আমেরিকান আধিপত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
* পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরান যতটা আগায়, ততটাই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার অজুহাত বেড়ে যায়।

এই অবস্থায় ইরান-ইসরাইল সংঘাত আমেরিকার চোখে কেবল দুই রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব নয়, বরং 'নৈতিকতার যুদ্ধে' নিজস্ব পক্ষ নেওয়ার উপায়ও।

**তেল, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক প্রভাব**

মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে তেলের সম্পর্ক গভীর।

* ইরান এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ তেল রপ্তানিকারক দেশ।
* এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য ইরানের দিকে গেলে বিশ্ব তেলের বাজারে প্রভাব পড়বে।
* যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে, যেখানে শক্তির নিয়ন্ত্রণ তার হাতে থাকবে, ইরানের হাতে নয়।

তেল ও গ্যাসের এই রাজনৈতিক খেলা ইসরাইলকে আমেরিকার অপরিহার্য কৌশলগত অংশীদার বানিয়ে রেখেছে।

 **ইসরাইলপন্থী লবির দৃঢ় অবস্থান**

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইসরাইলপন্থী লবিগুলোর প্রভাব ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

* ইসরাইলপন্থী সংগঠনগুলো প্রচুর তহবিল দিয়ে মার্কিন রাজনীতিবিদদের প্রভাবিত করে।
* কংগ্রেসে ইসরাইলের স্বার্থরক্ষাকারী প্রতিনিধি ও সিনেটরের সংখ্যা কম নয়।
* প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ইসরাইলপন্থী ভোটারদের মন জয় করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলপ্রীতি শুধু কূটনীতির ব্যাপার নয়, তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিরও অংশ।

**মানবাধিকারের দোহাই, কিন্তু ব্যতিক্রম যখন ইসরাইল**

ইরান মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে যুক্তরাষ্ট্র মুখর হয়—

* কিন্তু ইসরাইল গাজায় হামলা চালালে বা ফিলিস্তিনে নারী-শিশুর মৃত্যু ঘটালেও তা 'আত্মরক্ষা' বলে চিত্রিত হয়।
* একই নীতির দুটি ব্যাখ্যা— একদিকে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে সামরিক সহায়তা।

এই দ্বিমুখী নীতি প্রমাণ করে, মানবাধিকারের ব্যাখ্যা আমেরিকার জন্য নৈতিক প্রশ্ন নয়, বরং কৌশলগত হাতিয়ার।

 **শেষ কথা**

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ যতটা ধর্মীয় বা নিরাপত্তা বিষয়ক, তার চেয়েও বেশি এটি ভূরাজনৈতিক আগ্রাসনের নাট্যমঞ্চ।

* যুক্তরাষ্ট্র এখানে এক নেপথ্য পরিচালক, যার ইচ্ছায় দৃশ্যপট বদলায়।
* ইসরাইল তার যোদ্ধা, আর ইরান সেই প্রতিপক্ষ, যাকে শত্রু বানিয়ে রেখে নিজেদের অস্তিত্ব ও আধিপত্যের বৈধতা তুলে ধরা যায়।

এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ইসরাইলের পাশে দাঁড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান নয়, বরং কৌশলগত প্রয়োজন।

Nessun commento trovato