close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইন্টারপোল টার্গেটে শেখ হাসিনা ও কাদের! ১২ শীর্ষ নেতা বিপাকে, আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া শুরু..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিদেশে পলাতক শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও বেনজীর আহমেদসহ ১২ সাবেক প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছে বাংলাদেশ। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতির অভিযোগে চলছে আন্তর্জাতিক চাপ..

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রাক্তন আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ ১২ জন শীর্ষ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। এর ফলে, আন্তর্জাতিকভাবে তাঁদের অবস্থান শনাক্ত ও ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এই আবেদন এসেছে তিনটি ধাপে, যার মধ্যে প্রথমে ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির অভিযোগে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়। এরপর ১০ এপ্রিল একযোগে শেখ হাসিনা ও অন্য ১০ নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আবেদন পাঠানো হয়। শেখ হাসিনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনুরোধে ইতোমধ্যে তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং রবিবার দাখিল হচ্ছে তদন্ত প্রতিবেদন।


 কারা কারা রয়েছেন রেড নোটিশের তালিকায়?

রেড নোটিশ জারির জন্য যাঁদের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে, তাঁরা হলেন:

  1. শেখ হাসিনা – প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী

  2. ওবায়দুল কাদের – প্রাক্তন সেতুমন্ত্রী

  3. আসাদুজ্জামান খান – প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

  4. আ ক ম মোজাম্মেল হক – প্রাক্তন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

  5. হাছান মাহমুদ – প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

  6. জাহাঙ্গীর কবির নানক – প্রাক্তন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী

  7. মহিবুল হাসান চৌধুরী – প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী

  8. শেখ ফজলে নূর তাপস – প্রাক্তন মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ

  9. তারিক আহমেদ সিদ্দিক – প্রাক্তন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা

  10. নসরুল হামিদ – প্রাক্তন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

  11. মোহাম্মদ আলী আরাফাত – প্রাক্তন তথ্য প্রতিমন্ত্রী

  12. বেনজীর আহমেদ – প্রাক্তন আইজিপি


কী অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে?

বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও অন্য ১১ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, গুম-খুনরাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এই অভিযোগগুলো ট্রাইব্যুনালে ওঠে আসে।

বিশেষ করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে থাকা তিনটি মামলা অত্যন্ত গুরুতর। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ২০২৩ সালের গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধ

  • ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনায় হেফাজত নেতাকর্মীদের হত্যা

  • গত ১৫ বছরে গুম-খুনের দায়ে দায়েরকৃত মামলা


 আন্তর্জাতিক মঞ্চে রেড নোটিশের গুরুত্ব

রেড নোটিশ মানে সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না হলেও, ইন্টারপোল সদস্যভুক্ত ১৯৬টি দেশের যেকোনো বন্দরে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করা যেতে পারে। এতে করে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ কঠিন হয়ে পড়ে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ হয়।

বর্তমানে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশি ৬২ জনের রেড নোটিশ আছে, তবে নতুন এই ১২ জনের নাম এখনো তালিকায় যুক্ত হয়নি। কারণ, রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে ইন্টারপোল সাধারণত দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের পর সিদ্ধান্ত নেয়।


 কে কোথায় পলাতক?

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান, যেখান থেকে এখনো ফেরেননি। ভারতের সঙ্গে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে।

সাবেক মেয়র তাপস দেশ ছাড়েন ৩ আগস্ট। বেনজীর আহমেদ দেশ ছাড়েন ২০২৩ সালের মে মাসে, যখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। অনেকেই এখন ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, বা উত্তর আমেরিকায় অবস্থান করছেন।


 ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ ও জটিলতা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিদেশে পলাতক নেতাদের ফিরিয়ে আনতে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  1. অনেকে অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি অর্জন করেছেন

  2. তাঁরা বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করে লবিস্ট বা আইনজীবী নিয়োগ করছেন, যাতে রেড নোটিশ কার্যকর না হয়

তবে সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন জানিয়েছে, বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পলাতকদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলবে।


 শেষ কথা

এই ১২ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি হলে বাংলাদেশে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি রাজনৈতিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এত বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ কার্যকর হবে। সময় যত গড়াবে, ততই আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে, আর দেশের সাধারণ জনগণও জানতে চাইবে—এই পলাতকরা আদৌ ফিরবেন কিনা, নাকি বিচার এড়িয়েই যাবেন?

 আগামীকাল তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলে শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ বিচার প্রক্রিয়া এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এখন অপেক্ষা শুধু ইন্টারপোলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি


News Card Generator