close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ইডেন মহিলা কলেজের সেই সাবেক ছাত্রীকে বিয়ে করলেন গায়ক নোবেল..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
একজন তারকা, একজন অভিযোগকারী এবং এক চাঞ্চল্যকর মামলা। ধর্ষণের অভিযোগে কারাবন্দি নোবেল শেষমেশ বিয়ে করলেন সেই ইডেন কলেজছাত্রীকে—কারাগারের ভেতরেই! প্রেম, অভিযোগ, বিচার—সব মিলে দেশের নজিরবিহীন আলোচিত এক অধ..

বাংলাদেশের সঙ্গীত অঙ্গনের আলোচিত নাম মাঈনুল আহসান নোবেল। টেলিভিশনের গানের মঞ্চ থেকে যাত্রা শুরু করে দ্রুত জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসা এই গায়ক সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে আটক হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায়, তিনি বিয়ে করলেন সেই তরুণীকেই যিনি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।

এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে, কারা কর্তৃপক্ষ ও উভয় পক্ষের স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির। তিনি বলেন কারাবিধি অনুসারে আবেদন এবং আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর যথাযথ আইন অনুসরণ করেই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

এর আগে, নোবেলের পক্ষ থেকে একটি লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হয় আদালতে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ জুন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার ওই বিয়ের অনুমতি দেন।

বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন দু’পক্ষের স্বাক্ষী—নাজমা হোসেন, সাবিহা তারিন, মো. খলিলুর রহমান ও মো. সাদেক উল্লাহ ভূঁইয়া।
সবাই আইন অনুযায়ী কাগজপত্র যাচাই করে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর দেন।

গত ২০ মে সঙ্গীতশিল্পী নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা একটি মামলায়। মামলার বাদী ছিলেন ইডেন মহিলা কলেজের এক সাবেক ছাত্রী, যিনি অভিযোগে বলেন, সাত মাস ধরে একটি ভাড়া বাসায় আটকে রেখে তাঁকে বারবার ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।

মামলার শুনানিকালে নোবেলের আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, এই তরুণী আসলে নোবেলের স্ত্রী। তবে ওই সময় তারা কোনো কাবিননামা জমা দিতে না পারায় আদালত সেই দাবি গ্রহণ করেননি।

এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে শুরু হয় জোর আলোচনা। নোবেলের অতীত জীবন, ব্যক্তিত্ব, এবং এই অভিযোগ ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক গণমাধ্যমে শিরোনামে পরিণত হয়।

কারাগারে বসে বিয়ের ঘটনা বাংলাদেশে বিরল নয়, তবে ধর্ষণ মামলার বাদীকেই কারাবন্দি আসামির বিয়ে করার ঘটনা অত্যন্ত ব্যতিক্রম ও নজিরবিহীন।
আইনজীবীদের মতে, আদালতের অনুমতি এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের সম্মতি থাকলে কারা বিধিমালা অনুযায়ী এমন বিয়ের আয়োজন করা আইনসঙ্গত।

এই ঘটনাকে কেউ দেখছেন “বিচারিক প্রক্রিয়ার মানবিক দৃষ্টান্ত” হিসেবে, আবার কেউ বলছেন—“একটি বিতর্কিত সম্পর্কের অদ্ভুত মোড়।

নোবেল ও তরুণীর এই বিয়ের মধ্য দিয়ে একদিকে মামলা ও অভিযোগ নতুন মোড় নিতে পারে, অন্যদিকে আইনি জটিলতা আরও বেড়ে যেতে পারে। বিয়ের মাধ্যমে পূর্বের অভিযোগ আপস বা প্রত্যাহার করা হলে তা কীভাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে—তা এখনো অনিশ্চিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্ষণ একটি অপরাধমূলক মামলা, যেখানে রাষ্ট্রই প্রধান পক্ষ। তাই ভুক্তভোগীর বিয়ে করলেও মামলার প্রক্রিয়া থেমে যায় না—যতক্ষণ না আদালত নিজে তা খারিজ করে।

এই ঘটনা শুধুমাত্র এক সেলেব্রিটি বা একজন অভিযোগকারীর গল্প নয়। এটি আমাদের সমাজ, আইন ও নৈতিকতার জটিল বাস্তবতা তুলে ধরছে। যেখানে ভালোবাসা, অভিযোগ, বিচার ও সম্পর্ক—সব কিছু একসূত্রে গাঁথা হয়ে তৈরি করছে এক অভূতপূর্ব সংবাদ অধ্যায়।
নোবেলের জীবন, কেরিয়ার ও ভবিষ্যৎ এখন পুরোপুরি ভিন্ন এক দিকে মোড় নিচ্ছে—তা সময়ই বলে দেবে এই গল্পের শেষ কোথায়।

نظری یافت نشد