মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এবার সরব হলো বিশ্বের অন্যতম কঠোর প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছে দেশটি। শুধু তাই নয়, তারা এটিকে ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্বের সরাসরি লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেছে।
গত ১৮ জুন, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিসিএনএ (KCNA) এক সরকারিভাবে অনুমোদিত বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন—
আমরা ইরানের ওপর ইসরায়েলের নৃশংস হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বেসামরিক মানুষ হত্যা করে ইসরায়েল এমন এক অপরাধ করছে যা মানবতা কখনোই ক্ষমা করবে না।”
এই সামরিক আগ্রাসন শুধু ইরান নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক বিপজ্জনক যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছে।”
উত্তর কোরিয়া বলেছে, এই হামলার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো— ইসরায়েল কেবল একটি আগ্রাসী রাষ্ট্র নয়, বরং একটি ক্যান্সারের মতো বিষাক্ত অস্তিত্ব, যার পেছনে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের নিরব সমর্থন।
বিশ্ব এখন যে সংকটের মুখে, তা আরও গভীর হবে যদি এই ধরনের আগ্রাসন থামানো না হয়। ইসরায়েলের আচরণ আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
উল্লেখ্য, ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে ইরানের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। টার্গেট করা হয়েছে পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, সামরিক ঘাঁটি এবং সাধারণ আবাসিক এলাকা। এতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কয়েকজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং বহু সাধারণ মানুষ নিহত হন।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইরানও ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় পাল্টা প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়। ইতোমধ্যে দেশটির বেশ কিছু তেল শোধনাগার ও বন্দর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। পুরো সংঘাতটি এখন টানা ছয়দিন ধরে চলমান, এবং থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়ার এমন প্রকাশ্য অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের সংকটকে আরও জটিল করে তুলবে।
রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে—যার অর্থ, ভবিষ্যতে হয়তো একটি বৃহৎ আঞ্চলিক কিংবা বৈশ্বিক সংঘাতের আশঙ্কা অমূলক নয়।
উত্তর কোরিয়ার মতো নির্জন ও কড়া অবস্থানের রাষ্ট্র যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেয়, তখন বিষয়টি নিছক রাজনৈতিক বিবৃতি থাকে না। এটি বিশ্ববাসীর জন্য এক ভয়াবহ ইঙ্গিত— আমরা কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে?