মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু এখন তেলআবিব। শনিবার ভোরে ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনগুলো ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ফাঁকি দিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে আছড়ে পড়ে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো শহর, আর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
এটি ছিল কেবল একটি আক্রমণ নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের সরাসরি বার্তা। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এই হামলার পরিকল্পনা করে কার্যকর করে রাতের নিঃশব্দ অন্ধকারে, যার ফলাফল ছিল ভয়াবহ: বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড, বিস্ফোরণে নিহত ও আহত অসংখ্য, আর আতঙ্কিত ইসরাইলি নাগরিকরা সাইরেন শুনে ছুটে যায় বাংকারে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, ইসরাইল অধিকৃত ভূখণ্ডে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি এবং সরবরাহ কেন্দ্রগুলো ছিল এই হামলার প্রধান লক্ষ্য। বিশেষ করে তেলআবিব, হাইফা, আশদোড এবং হোলোনে নজিরবিহীন বিস্ফোরণ ঘটেছে।তেলআবিবের উপকণ্ঠ হোলোন এলাকায় একটি বহুতল ভবনে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানে, যার ফলে মুহূর্তেই ভয়াবহ আগুন লেগে যায় এবং পুরো ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। দমকল বাহিনী ও উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে ভয়ানক।
ইসরাইলি টিভি চ্যানেল ১২-এর তথ্য অনুযায়ী, ইরান এ অভিযানে মোট ১০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তবে ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী এর মধ্যে মাত্র ৫টি প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। বাকিগুলো সরাসরি আঘাত হানে বিভিন্ন স্থানে, যার মধ্যে তেলআবিবের কিছু আবাসিক এলাকা এবং সামরিক স্থাপনাও রয়েছে।এ হামলার পর পুরো ইসরাইলে সাইরেন বেজে ওঠে। ভোর রাতের নীরবতা মুহূর্তেই আতঙ্কে পরিণত হয়। রাজধানীর একাধিক জায়গায় ছুটোছুটি, মানুষের চিৎকার, উদ্ধার তৎপরতা এবং বিস্ফোরণের শব্দে ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা।ইরানের ধারাবাহিক পাল্টা পদক্ষেপে চাপে পড়ে ইসরাইল নিজেদের রক্ষায় আরও কঠোর প্রস্তুতি নিতে বাধ্য হয়েছে। দেশটি তাদের নতুন “লাইটনিং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম” মোতায়েন শুরু করেছে, যার মাধ্যমে ইরানি ড্রোনগুলোকে আকাশেই ধ্বংস করা সম্ভব বলে দাবি করছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।
তবে প্রশ্ন উঠেছে—এই নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে, যখন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এতটাই নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যেমন ‘ডোম সিস্টেম’, এই হামলায় বড় ধরনের ব্যর্থতা দেখিয়েছে। এবং এটি ইসরাইলের জন্য কৌশলগত দিক থেকে বড় ধাক্কা।
এই আঘাত শুধু একটি প্রতিশোধমূলক হামলা নয়, বরং একটি স্পষ্ট বার্তা: ইরান চায় না আর চুপ থাকতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে সামনে সম্পূর্ণ পরিসরের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠবে।ইসরাইল-ইরান দ্বন্দ্ব মধ্যপ্রাচ্যকে ভয়ানক এক অস্থিরতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। তেলআবিবের আকাশে এখনো ধোঁয়া উড়ছে, আতঙ্ক এখনো কাটেনি। মানুষ জানে না—পরবর্তী আঘাত কখন, কোথায় আসবে।আর বিশ্ববাসী অপেক্ষা করছে—এই উত্তেজনা কি সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে?
ইরানের এই হামলা নিছক প্রতিশোধ নয়, এটি ছিল এক কৌশলগত শক্তির প্রদর্শন। তেলআবিবে অগ্নিকাণ্ড আর বিস্ফোরণের ছবি এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভাইরাল।
এই হামলার জবাব কিভাবে দেবে ইসরাইল? আর কতটা রক্ত ঝরবে এই সংঘাতে?