ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) আবারও উত্তাল। কলেজ প্রশাসনের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভ। শনিবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় কর্তৃপক্ষ যখন অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়, তখন থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।
তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—একতরফা এই সিদ্ধান্ত তারা মানবেন না এবং হল ছাড়বেন না। তাদের ভাষ্য, প্রশাসন কোনো আলোচনা না করেই অগণতান্ত্রিকভাবে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এবং শিক্ষার্থীদেরকে জোর করে হল ছাড়তে বলছে, যা পুরোপুরি অযৌক্তিক ও অমানবিক।
ঢামেকের একজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী তৌহিদুল আবেদীন তানভীর বলেন,মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা হল ত্যাগ করছি না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই এমন একতরফা সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি, এটি কোনো অপরাধ নয়।
তানভীর আরও বলেন,পরিত্যক্ত ভবনে আমাদের জীবন ঝুঁকির মুখে থাকলেও তার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং আমাদের কণ্ঠ রোধ করতে এবং আন্দোলন দমন করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি প্রশাসনের চরম উদাসীনতা। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানব না।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের মূল দাবি—বাসযোগ্য আবাসন ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। ঢামেকের একাধিক হল ও ভবন দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বর্ষার সময় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে, দেয়ালে ফাটল, এমনকি সাপ-পোকা-মাকড়ের উৎপাতও নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু কোনো সংস্কার হয়নি বছরের পর বছর।
এরই মধ্যে প্রশাসন দাবি করেছে, ছাত্রদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছেন, যদি সত্যিই নিরাপত্তার কথা ভাবা হতো, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা আগে নেওয়া হতো। আন্দোলন চলাকালে হঠাৎ করে হল ছাড়ার নির্দেশ কেবল ‘প্রশাসনিক দমন-পীড়ন’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বর্ষের এবং বিভাগীয় ছাত্রছাত্রীরা। তাদের বক্তব্য—এই আন্দোলন কেবল একটি ব্যাচ বা বর্ষের নয়, বরং পুরো মেডিক্যাল শিক্ষার গুণগত মান ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার সাথে জড়িত।
ক্যাম্পাসজুড়ে এখনো আন্দোলনের ঢেউ, পোস্টার, স্লোগান আর মানববন্ধন চলছেই। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা সংলাপ চান, সমাধান চান, কিন্তু দমন চান না।
তাদের সাফ হুঁশিয়ারি—চাপিয়ে দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবেন না। আন্দোলন অব্যাহত থাকবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত।