close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

হে রাষ্ট্র, আমি সামান্য নাগরিক,আমার সামান্য নিরাপত্তা কোথায়!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আপনাকে আয়েশ করে এক কাপ চা খাওয়ার নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একটা প্রশংসা বাক্য ব্যয় করার নিরাপত্তা রাষ্ট্র আপনাকে দিতে পারেনি।..

মনে করেন ,আপনি পরিকল্পনা করলেন বাসার সামনে থাকা চা দোকানে আয়েশ করে একটা চা খাবেন। পরিকল্পনা মাফিক বাসা থেকেও বের হলেন। চা দোকানে গিয়ে দুধ- চিনি বেশি দিয়ে এক কাপ চা অর্ডার করলেন।

চা দোকানওয়ালা মামা আপনাকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিলো। এই শৈত্যপ্রবাহের ভেতর গরম চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আয়েশ করে কাপে চুমুক দিলেন। প্রথম চুমুকে গাঁয়ে শিহরণ দিলো। আহ! চমৎকার চা। চাওয়ালা মামার প্রশংসা করার আগেই আপনার মাথায় একটা বোমা কিংবা তীক্ষ্ণ  একটা বুলেট এসে বিদ্ধ করলো। মহুর্তে আপনি লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে।

মাথার মগজ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো নিমিষে। গলগলিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করলো। কেবলই আপনি এখন নিথর দেহ। অথচ কথা ছিল আপনি দুধ-চিনিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া চা আয়েশ করে খাবেন। কথা ছিল আপনার মনে জেগে উঠা চাওয়ালা মামার প্রশংসা করার। কিন্তু তা আর হলো না।  কেন হলো না?  হওয়ার তো কথা ছিল। 


বরং বলুন, আপনার নাগরিক সামান্য ইচ্ছেটুকু রাষ্ট্র আপনাকে হতে দেয়নি। আপনাকে আয়েশ করে এক কাপ চা খাওয়ার নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একটা প্রশংসা বাক্য ব্যয় করার নিরাপত্তা রাষ্ট্র আপনাকে দিতে পারেনি। তাহলে জোর গলায় কি বলা যায় না, হে রাষ্ট্র আমি সামান্য নাগরিক,আমার সামান্য নিরাপত্তা কোথায়? এইবার চলুন যাওয়া যাক, এই রাষ্ট্রের ঘুণেধরা কাঠামো ও নাগরিক নিরাপত্তার আলাপে। 

বুধবার ,সন্ধ্যায় আনুমানিক সাতটার দিকে একুশ বছর বয়সের সিয়াম ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। সিয়াম একটি কার ডেকোরেশনে চাকরি করতেন। চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি মগবাজার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সংসদের সামনে একটি চা দোকানে যান। সেখানে গিয়ে চা দোকানওয়ালাকে চায়ের অর্ডার দেন।

দোকানদার কাপ ধোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ,ঠিক সে সময়  ফ্লাইওভার থেকে দুবৃত্তের ছোড়া ককটেল এসে পড়ে সিয়ামের মাথায়। মুহূর্তে সিয়ামের মাথার মগজ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সিয়াম সেখানেই মারা যায়। 

এইবার বলুন ,সিয়ামের অপরাধ কোথায়? চা খেতে রাস্তায় বের হওয়া নাকি এই রাষ্ট্রে জন্ম নিয়ে রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া? 

এইবার আরেকটু পেছনে যায়। সিয়ামের পরিবার দারিদ্র্যতায় জর্জরিত। ঋণের কারণে তার বাবা পরিবারের সকল সদস্য নিয়ে ঢাকায় আসেন। ভেবেছিলেন সবাই মিলে উপার্জন করে পরিবারকে একটু স্বচ্ছতা দিবেন। তাই'তো সিয়ামের বাবাও ঢাকায় রিকশা চালাতে শুরু করেন। সিয়াম মারা যাবার পর ,ঘটনাস্থলে তার বাবার আহাজারি।

কেন তিনি তার সন্তানকে ঢাকায় এনেছেন? কেন হারাতে হয়েছে তার আদরের টুকরো সন্তানকে? তিনি এখন কি করবেন?  এই যে অশ্রুচোখে বাবার আর্তনাদের প্রশ্ন , এইসব প্রশ্নের উত্তর কে দিবে?  কে দিতে বাধ্য?

এইসকল প্রশ্ন একজন বাবা যতখানি করেছেন তার চেয়ে একটা রাষ্ট্রের নাগরিক তার রাষ্ট্রকে করেছেন। 
সিয়ামের তো কোন অপরাধ নেই। তাহলে কেন তাকে ককটেলের আঘাতে মরতে হবে?  সিয়ামের বাবার তো কোন অপরাধ নেই।  তাহলে কেন তিনি তার সন্তানকে হারাবেন? 

একটা রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকরা শুধু একটু নিরাপত্তা চাই। এটা রাষ্ট্র দিতে বাধ্য। অথচ নাগরিকরা তা কি পাচ্ছে?  প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। 


জুয়েল আজ্জম

کوئی تبصرہ نہیں ملا


News Card Generator