close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

হাটে অতিরিক্ত টোল দাবি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ধুনটের মথুরাপুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রেখেছেন। টান পড়েছে বাজারে, ভোগান্তিতে ক্রেতারা।..

বগুড়ার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর হাটবাজারে টোল আদায়কে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি ইজারার অধীনে পরিচালিত হাটে অতিরিক্ত টোল দাবির অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে নেমেছেন কাঁচা তরকারি ও মসলা ব্যবসায়ীরা। বুধবার (২ জুলাই) সকাল থেকেই একযোগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যান তারা।

এতে বাজারে আগত ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। হাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও অন্যান্য মসলার দোকানগুলো বন্ধ থাকায় বাজারের চিত্র বদলে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মথুরাপুর হাট-বাজার এ বছর ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় ইজারা নেন জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তি। আগে যে ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর মাত্র ২,৫০০ টাকা হারে টোল দিতেন, এখন তাদের কাছে ১০,৫০০ টাকা দাবি করা হচ্ছে—যা আগের তুলনায় চার গুণের বেশি। হঠাৎ এই অস্বাভাবিক টোল বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাজারের ব্যবসায়ীরা।

মথুরাপুর হাটের প্রায় ৫০টির মতো তরকারি ও মসলার দোকান একযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসময় বাজারে আসা অনেক ক্রেতাকে খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে।

ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল হামিদ জানান, “প্রায় ৫০ বছর ধরে এই হাটে ব্যবসা করে জীবিকা চালাচ্ছি। কিন্তু এবার ইজারাদারের অমানবিক আচরণ ও চার গুণ বেশি টোল আদায়ের চাপ আমাদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই টোল দিলে ব্যবসা চালিয়ে লাভ নয়, উল্টো লোকসান হবে। তাই আমরা ব্যবসা বন্ধ রেখে প্রতিবাদে নেমেছি।”

অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও জানায়, শুধু টাকার অঙ্কই নয়, ইজারাদারের আচরণেও সমস্যা রয়েছে। কেউ টোল দিতে দেরি করলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এমনকি পণ্য রাখার স্থান বদলের প্রস্তাব দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম নিজের অবস্থান থেকে বলেন, “আমি কোনো অতিরিক্ত টোল আদায় করছি না। হাটে মাছের আড়ত বসানোর জন্য কিছু জায়গা বদলের কথা বলেছি মাত্র। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি আশা করছি।”

তবে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য তার সঙ্গে মেলে না। তারা বলছেন, আলোচনা নয়—একতরফাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে এবং হুমকি-ধামকির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, “এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

স্থানীয়দের মতে, এ ধরনের অনিয়ম বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। হাটবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

একদিকে ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট, অন্যদিকে প্রশাসনের ‘অপেক্ষমাণ’ অবস্থান—এই দুইয়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা ও হাটের স্বাভাবিক বাণিজ্যচক্র।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি হাটে এমন বাড়াবাড়ি কতদিন চলবে? টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট তৈরি হতে পারে।

এই ঘটনা শুধু ধুনটের একটি হাটের নয়, বরং সারা দেশের হাটবাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার একটি প্রতিচ্ছবি। অতিরিক্ত টোল, হুমকি, অসংবেদনশীল আচরণ—এসব বন্ধে এখনই প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। নয়তো ছোট ব্যবসায়ীরা একে একে হাট ছাড়বে, আর বাজার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে গুটিকয়েক শক্তিশালী ইজারাদারের হাতে।

Aucun commentaire trouvé