close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

হাসনাতকে বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হয়েছিল গাড়ি চালক হাওলাদার

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ছাত্রনেতাকে রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হলেন গরিব রিকশাচালক পিতার সন্তান শাহীন। স্ত্রী-সন্তান পড়ে আছে অভাব-অনটনে। এই গল্পটি শুধু এক পরিবারের নয়, পুরো জাতির অমানবিক বাস্তবতার।..

অভাবের সংসারে স্বপ্ন ছিল ছোট, তবু অটুট মনোবলে দিন কাটিয়ে গিয়েছিলেন মোংলার কচুবুনিয়া গ্রামের সাহসী সন্তান শাহীন হাওলাদার। একসময় পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও বাস্তবতা তাকে ঠেলে দেয় কাজের জগতে। রিকশা চালানো থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজের মধ্যে দিয়ে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়কে অতিক্রম করে শেষে গুলিস্তানে রেন্ট-এ-কারের ছোট একটি ব্যবসার মাধ্যমে পরিবার চালাতেন তিনি।

কিন্তু ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট, ঢাকার সচিবালয়ের সামনে ঘটে যায় সেই বিভীষিকাময় দিন, যা বদলে দেয় এক সম্পূর্ণ পরিবারকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যখন ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলা চালায় আনসার সদস্যরা, তখন সাহসী শাহীন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, ন্যায়ের প্রতি নিষ্ঠা তাকে ঠেলে দেয় সম্মুখে। ঝাঁপিয়ে পড়েন ছাত্রনেতাকে রক্ষা করতে।

এই চেষ্টাই হয়ে ওঠে তার জীবনের শেষ কাজ।

রিক্তা বেগম, শাহীনের স্ত্রী, অশ্রুভেজা কণ্ঠে বলেন, "আমার স্বামী যখন দেখলো হাসনাতের ওপর হামলা হচ্ছে, তখন সে আর নিজেকে সামলাতে পারেনি। পেছন থেকে কয়েকজন আনসার সদস্য তার মাথায় একের পর এক আঘাত করতে থাকে। সেখানেই বমি করে নিস্তেজ হয়ে পড়ে শাহীন। পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হলেও ৪ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়।"

শাহীন হাওলাদারের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায় একটি সংসার, স্তব্ধ হয়ে যায় তিনটি শিশুর ভবিষ্যৎ। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে এখন রিক্তা বেগমের জীবনে যেন নেমে এসেছে অন্ধকারের দীর্ঘ ছায়া। তিনি বলেন, "আমার ছেলে আর স্বামী—দুজনই আন্দোলনে যেত। প্রতিদিন মনে হতো, কখন কে আর ফেরে না। ভাবিনি স্বামীর মৃত্যু দেখে যেতে হবে, আর আমার ছেলেরা এত ছোট বয়সে এত বড় শূন্যতার মুখোমুখি হবে।"

জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে যে পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছেন রিক্তা, তা কেবল শুরুর কিছু ক্ষতই মেরামত করতে পেরেছে। কিন্তু যেসব ঋণ শাহীন রেখে গেছেন ব্যবসার জন্য, সেগুলো এখনো রয়ে গেছে অর্ধেক পরিশোধিত অবস্থায়। তার উপর তিন সন্তান, বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি, এবং একা এক নারীর কাঁধে একটি পরিবার টিকিয়ে রাখার লড়াই।

রিক্তা বলেন, "এখন আর কেউ নেই পাশে। শুধু চাই সরকার আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিক। তাদের যেন ভবিষ্যৎ থাকে। আর আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হোক।"

একজন নাগরিক, একজন বাবা, একজন সাহসী মানুষ—শাহীন হাওলাদারের মতো মানুষরা থাকেন না ইতিহাসের পাতায়, কারণ তারা সাধারণ। কিন্তু তাদের ত্যাগ অসাধারণ। হাসনাত আজ বেঁচে আছেন, একটি ছাত্র আন্দোলন টিকে আছে—তবে যার কারণে তা সম্ভব, সেই শাহীনের পরিবার পড়ে আছে প্রান্তিক এক কোণে।

রাষ্ট্র কি মনে রাখবে এই আত্মত্যাগকে?

শাহীন হাওলাদারের জীবনের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যে কোনও বড় পরিবর্তনের পেছনে থাকে সাধারণ মানুষের অগোচরে দেওয়া অসাধারণ ত্যাগ। কিন্তু তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকারে না হারিয়ে যায়—এ দায়িত্ব রাষ্ট্র, সমাজ ও আমাদের সবার।

کوئی تبصرہ نہیں ملا