তেইশ ডিসেম্বরের সকাল। ভোরের আলো এসেছে, কিন্তু জাতির ভেতরে আলো জ্বালানোর মতো কোনো উপলক্ষ নেই। কারণ গতকাল বাংলাদেশ শোক পালন করেছে—একজন বীর বিপ্লবী যোদ্ধার মৃত্যুতে। যে মানুষটি বুক চিতিয়ে বলেছিল, “জান দেবো, জুলাই দেব না”—আজ সে নেই। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটি শুধু একজন মানুষের মৃত্যু নয়; এটি রাষ্ট্র, রাজনীতি ও বিবেকের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ অভিযোগ।
হাদির মৃত্যু কি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা? নাকি এটি সেই দীর্ঘ তালিকারই আরেকটি নাম, যেখানে ভিন্নমত, প্রতিবাদ আর স্বপ্নের মূল্য দিতে হয় জীবন দিয়ে?
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্ট বাঙালি জাতিকে দেখিয়েছিল এক নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনা। রাজপথে নেমেছিল সাধারণ মানুষ, তরুণেরা বুক পেতে দিয়েছিল গুলির সামনে। জন্ম নিয়েছিল একটি নতুন স্বপ্ন—একটি ন্যায়ের বাংলাদেশ, একটি মানুষের বাংলাদেশ। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রশ্ন উঠছে—সেই স্বপ্ন আজ কোথায়?
আমরা কি ভুলে গেছি জুলাইয়ের রক্ত? ভুলে গেছি রাজপথে লাশ পড়ে থাকার দৃশ্য? ভুলে গেছি সেই প্রতিজ্ঞা—এই দেশ আর আগের মতো চলবে না?
আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতা নির্মমভাবে জানিয়ে দেয়—স্বপ্ন টিকে থাকে না, যদি তা ক্ষমতার স্বার্থের সঙ্গে না মেলে। রাজনীতির মায়াজালে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা আবারও কোণঠাসা। ক্ষমতার হিসাব–নিকাশে গণমানুষের কথা অনুপস্থিত। হাদির আদর্শও কি সেই বিস্মৃতির তালিকায় ঢুকে পড়বে?
প্রশ্ন এখানেই—আমরা কি শুধু শহীদের লাশে ফুল দিতে জানি, কিন্তু তাদের আদর্শ বাঁচিয়ে রাখতে ব্যর্থ হই? আমরা কি প্রতিবাদকে ভালোবাসি কেবল যতক্ষণ তা নিরাপদ থাকে?
হাদি বলে গেছে, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হওয়া উচিত। সে বলেছিল—এই দেশে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করা যাবে না। কিন্তু আজ সেই বার্তাগুলো কি রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ হয়েছে? নাকি সেগুলো কেবল ফেসবুক পোস্ট আর স্মরণসভায় সীমাবদ্ধ?
অনেকে বলছেন—একজন হাদি হারিয়ে গেছে, আরও লক্ষ হাদি জন্মাবে। কথাটি আশাবাদী, কিন্তু বাস্তবতা আরও কঠিন। কারণ যে রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রশ্নকারীদের জায়গা দিতে ব্যর্থ, সেখানে সেই লক্ষ হাদিরা জন্মানোর আগেই হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।
হাদি মারা যায়নি—এই বাক্যটি আবেগের। কিন্তু রাজনীতির ভাষায় কঠিন সত্য হলো—হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। আর সেই হত্যার দায় শুধু ট্রিগার টানার হাতে নয়; দায় সেই ব্যবস্থার, যে ব্যবস্থা প্রশ্নকে ভয় পায়।
শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটা হাদিকে নিয়ে নয়—প্রশ্নটা আমাদের সবাইকে নিয়ে।
বাঙালি জাতি কি পারবে তার স্বপ্ন পূরণ করতে?
নাকি আমরা আবারও ইতিহাসকে বলব—আমরা চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সাহস ধরে রাখতে পারিনি?
হাদি ফিরে আসবে কি না, তা ভবিষ্যৎ বলবে।
কিন্তু যদি ফিরে আসে—লক্ষ হাদির রূপে—তাদের জন্য জায়গা তৈরি করার দায়িত্ব আজ আমাদেরই।
close
লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!
Aucun commentaire trouvé



















