ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় সম্প্রতি ভারী নির্মাণযন্ত্র ও ক্রেনের ছবি ধরা পড়েছে। ম্যাক্সার টেকনোলজিসের নতুন স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, সেখানে খননকারী মেশিন এবং ক্রেনসহ একটি নতুন রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। এসব ছবি ২৯ জুন তোলা হয়েছে এবং এতে স্পষ্টভাবে নির্মাণ কাজের চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত বছর বাঙ্কার-ব্লাস্টার বোমা হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলায় স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছিল।
২৮ জুনের স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে পরমাণু অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড অ্যালব্রাইট জানান, নির্মাণ কাজের অংশ হিসেবে ক্ষতির মূল্যায়ন এবং রেডিওলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে স্থাপনার পুনর্গঠন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার পর বলেন, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে "ধ্বংস" করেছে এবং এতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উন্নয়ন অনেকটাই পেছানো হয়েছে। তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ দাবি কিছুটা অস্বীকার করে, ক্ষতির পরিমাণ গুরুতর হলেও বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেনি।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি মনে করেন, ইরান কয়েক মাসের মধ্যে আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করতে পারে, যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফোর্দোতে এই নির্মাণ কার্যক্রম ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় চালু করার সংকেত দেয়, যা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, নির্মাণ কাজের জন্য নতুন রাস্তার উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয়, স্থাপনার পরবর্তী বিস্তার অথবা নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে।
বিশ্বের পারমাণবিক পরিদর্শকরা এখন ফোর্দোর এই নতুন ছবি ও কার্যক্রমের উপর দৃষ্টি রাখছেন এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যেখানে পারমাণবিক সমঝোতার সম্ভাবনা কমছে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনা কঠিন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দুই পক্ষের মধ্যে দ্রুত সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছে।
ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে এই নতুন তথ্য বিশ্বের নানা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত বহন করছে, যা আগামী দিনে পারমাণবিক নিরাপত্তা, রাজনৈতিক কূটনীতি ও সামরিক দিক থেকে বড় প্রভাব ফেলবে।



















