ফারাক্কা বাঁধ এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফারাক্কা বাঁধ আজ বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ৪৯ বছর আগে ভাসানীর নেতৃত্বে শুরু হওয়া ফারাক্কা লংমার্চের তাৎপর্য আজ আরও গভীর ও প্রাসঙ্গ..

ফারাক্কা বাঁধ এখন একটি ভয়াবহ মরণফাঁদ, দেশের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে — এমনই আশঙ্কাজনক মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ৪৯ বছর আগে যেভাবে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল বাংলাদেশের মানুষ, আজ আবার সেই প্রতিবাদের সময় এসেছে।

আগামীকাল ১৬ মে ‘ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস’ উপলক্ষে বুধবার (১৫ মে) এক বিশেষ বাণীতে মির্জা ফখরুল বলেন, “১৬ মে আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতীকী দিন। এই দিনে দেশজুড়ে লাখো মানুষ এক হয়ে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে অংশ নেয়। আজকের দিনে এসে সেই সমস্যা আরও জটিল ও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।”

তিনি বলেন, “ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারতের পক্ষ থেকে গঙ্গা নদীর পানির প্রবাহ একতরফাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এই অঞ্চলে পানির সংকট ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। মাটি ফেটে যাচ্ছে, কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পরিবেশ হারাচ্ছে তার ভারসাম্য। অথচ ভারতের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন এবং নদী ব্যবস্থাপনা কনভেনশনের পুরোপুরি পরিপন্থী।”

তৎকালীন আওয়ামী লীগের দায়
মির্জা ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার সে সময় জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করে ভারতকে ফারাক্কা বাঁধ পরীক্ষামূলকভাবে চালুর অনুমতি দিয়েছিল। আর সেই পরীক্ষামূলক অনুমতিই পরিণত হয়েছে স্থায়ী বিপর্যয়ে। এখনও পর্যন্ত এই বাঁধ চালু রয়েছে এবং এর প্রভাবে বাংলাদেশের পানি অধিকার একেবারেই খর্ব হচ্ছে।”

ভাসানীর দূরদর্শিতা ও প্রতিবাদ
বিএনপি মহাসচিব মনে করিয়ে দেন, “মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী বিষয়টি যেভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলেছিলেন, তা ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং সাহসী পদক্ষেপ। তিনি বুঝেছিলেন, পানি শুধু একটি প্রাকৃতিক সম্পদ নয়— এটি একটি দেশের অস্তিত্ব ও স্বকীয়তার প্রশ্ন। সেইজন্যই তিনি লাখো জনতাকে নিয়ে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ করেছিলেন।”

বাংলাদেশের অস্তিত্ব সংকটে
ফখরুল বলেন, “আজ ২০২৫ সালে এসে আমরা আরও বিপজ্জনক এক বাস্তবতার মুখোমুখি। ভারত এখন শুধু গঙ্গা নয়, বরং ৫৪টি অভিন্ন নদীর ওপর একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করে যাচ্ছে। এই বাঁধসমূহের কারণে নদীর স্বাভাবিক ধারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে ভারতের স্বার্থে। ফলে বাংলাদেশ ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে, নদী হারাচ্ছে তার প্রবাহ, কৃষি হারাচ্ছে উৎপাদনশীলতা, জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছে ভারসাম্য।”

তিনি বলেন, “এই পানি সংকট শুধু একটি পরিবেশগত বিপর্যয় নয়; এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তা সংকটও। সরকার যদি এখনই যথাযথ কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বড় অংশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।”

আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান
ফখরুল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “বাংলাদেশের এই সংকট কোনো দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নয়, বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু। আন্তর্জাতিক পানি আইনের আলোকে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারকে থামাতে হবে। নয়তো, দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চল আরও ভয়াবহ পরিবেশগত ও মানবিক সংকটের মুখোমুখি হবে।”

ফারাক্কা দিবসের প্রাসঙ্গিকতা
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকের দিনে এসে আমরা বুঝতে পারি যে, ফারাক্কা দিবস কেবল একটি প্রতীকী দিন নয় — এটি আমাদের ভবিষ্যতের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের প্রতীক। আজও আমাদের প্রতিবাদ জানাতে হবে, আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।”



৪৯ বছর আগে শুরু হওয়া ফারাক্কা লংমার্চের তাৎপর্য আজ আরও বেশি বাস্তব। আজও বাংলাদেশ তার ন্যায্য পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত। আর এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে আবারও নতুন করে সোচ্চার হওয়ার সময় এসেছে। মির্জা ফখরুলের বক্তব্য শুধু একটি রাজনৈতিক মন্তব্য নয়, এটি একটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার ডাক।

No se encontraron comentarios