ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চিকিৎসা পেলেন কয়েক শ মানুষ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় চিকিৎসা পেলেন হাজারো গরিব মানুষ। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও ফ্রি ওষুধে উপকৃত হয়েছেন সবাই। আবেগে কেঁদেছেন অনেকেই।..

স্বপ্ন নয়, বাস্তব। কোনো বড় হাসপাতাল বা ব্যয়বহুল ক্লিনিক নয়—একটি ফাউন্ডেশনের মানবিক উদ্যোগে এবার গ্রামেই মিলেছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ও ওষুধ। ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ও তাঁর নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেশজুড়ে চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন শত শত গরিব মানুষ।

ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন ও এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয় দেশের বরিশাল, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নীলফামারী ও মাগুরায়। ক্যাম্পগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিকিৎসা নেওয়া মানুষের ভিড় দেখা যায়। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ—সবার মুখেই ছিল স্বস্তির ছাপ।

বরিশালের সদর উপজেলার সাহেবের হাট বাজারে ‘নজরুল সমাজকল্যাণ ক্লাব ও পাঠাগারে’ অনুষ্ঠিত মেডিকেল ক্যাম্পে ৩১১ জন রোগী চিকিৎসা নেন। ৬০ বছরের রাবেয়া বেগম জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট আর বুকের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। টাকা না থাকায় ডাক্তার দেখাতে পারেননি। খবর পেয়ে ক্যাম্পে এসে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ পান।

রাবেয়া বেগম বলেন, ‘মোগো গরিবে লইগা এমন আয়োজন য্যারা করছে, হ্যাগো আল্লায় ভালো করুক। আমি প্রাণ খুইল্লা দোয়া করমু।’

সেবাদানকারী চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন ডা. রউফুল ইসলাম হিমেল ও ডা. জয়দেব বোরাল। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন এসকেএফের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার দাস, আজিজুল ইসলামসহ অনেকেই।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটার করিম সুপার মার্কেটে স্থাপিত ক্যাম্পে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৫০ জন রোগী। এখানে দায়িত্ব পালন করেন ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মিনাক কুমার বিশ্বাস এবং প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. অনামিকা বাছাড়।

রোগীদের মধ্যে ছিলেন ২৮ বছরের শারমিন সুলতানা, ৬৫ বছরের মহব্বত আলীসহ আরও অনেকে। তাঁরা জানান, সহজভাবে এত উন্নত চিকিৎসা জীবনে প্রথম পেয়েছেন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার অঞ্জনগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত ক্যাম্পে ৪২৫ জন রোগী চিকিৎসাসেবা পান। সকাল থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ। রোগীদের দেখেন ডা. লুৎফুল নাহার, দেবাশীষ দেবনাথ, মনিরুজ্জামান শিমুল সহ একাধিক চিকিৎসক।

সহযোগিতা করেন এসকেএফের মেডিকেল সার্ভিস অফিসার ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা। উপস্থিত ছিলেন উপবিক্রয় ব্যবস্থাপক মাসুদ পারভেজ।

নীলফামারীর সৈয়দপুরে বেসরকারি হাসপাতাল নিউ এভার কেয়ারে অনুষ্ঠিত ক্যাম্পে ৩০০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা পান। শ্বাসকষ্টে ভোগা জাহানারা বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্টে ছিলাম। ডাক্তার দেখাইলাম, ফ্রি ওষুধও পাইলাম।’

চিকিৎসক ছিলেন ডা. মো. জাভেদ ইউসুফ, রাবেয়া সুলতানা, আতাউর রহমান প্রমুখ। তাদের সঙ্গে ছিলেন এসকেএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়ন পরিষদে আয়োজিত ক্যাম্পে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জন রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা পেয়েছেন। শিশু, গাইনি, মেডিসিন ও অর্থোপেডিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এখানে।

স্থানীয় বাসিন্দা আকিদুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে না গিয়ে, গ্রামে বসেই ডাক্তার দেখাইলাম! এটা অসাধারণ।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত হন ফারাজ আইয়াজ হোসেন। তিনি নিজের জীবনের বিনিময়ে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তাঁর দাদু লতিফুর রহমানও দেশের একজন খ্যাতিমান শিল্পপতি ছিলেন। তাঁদের স্মরণে এমন উদ্যোগ যেন শুধু প্রয়াতদের স্মৃতি নয়, বরং একটি মানবিক সমাজ গঠনের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।

ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন ও এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন গ্রামগঞ্জের হাজারো সাধারণ মানুষ। এই ক্যাম্পগুলো দেখিয়ে দিল—মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বড় প্রতিষ্ঠান নয়, চাই শুধু মানবিক মন।

لم يتم العثور على تعليقات


News Card Generator