close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

এনসিপিতে পদ পেয়ে তিনি বললেন, কোন দুঃখে বিএনপি ছাড়তে যাব

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কুমিল্লা জেলা এনসিপির সমন্বয় কমিটিতে ‘অনিচ্ছাকৃত নিযুক্তি’ ঘিরে তীব্র বিতর্ক। যার নাম পদে, তিনিই জানেন না—আর সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, "কোন দুঃখে বিএনপি ছাড়তে যাব?" রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে ..

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কুমিল্লা জেলা সমন্বয় কমিটির একটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ও বিতর্ক। কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে যাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, সেই আব্দুর রহিম জুয়েল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—তিনি এই দায়িত্ব সম্পর্কে কিছুই জানেন না। উল্টো তিনি মন্তব্য করেছেন, "আমি ৩৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করি। কোন দুঃখে বিএনপি ছাড়তে যাব?"

ঘটনার সূত্রপাত ১৭ জুন রাতে। ওই দিন জাতীয় নাগরিক পার্টির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ৩১ সদস্যের কুমিল্লা জেলা সমন্বয় কমিটি প্রকাশ করা হয়। সেখানে আব্দুর রহিম জুয়েলের নাম আসে ‘প্রধান সমন্বয়কারী’ হিসেবে। কিন্তু রাত পোহাতেই শুরু হয় নাটকীয় মোড়।

জুয়েল নিজেই তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট দিয়ে পুরো বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন। তিনি জানান, তার সঙ্গে কোনো রকম পূর্বপরিচিতি, আলোচনা কিংবা সম্মতি ছাড়াই এই কমিটিতে তার নাম দেওয়া হয়েছে। এরপর এনসিপি তাদের অফিসিয়াল পেজ থেকে কমিটির তালিকাটি সরিয়ে নেয়।

এনসিপি একটি নতুন তরুণদের সংগঠন। সেখানে আমি কেন যাব? আমার তো এমন কোনো রাজনৈতিক দুঃসময় চলছে না যে বিএনপি ছেড়ে পালাতে হবে। এটি আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল। পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছাড়া এটা কিছু নয়।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বীমা কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় নবাব ফয়জুন্নেছা কলেজে ছাত্রদল সভাপতি হিসেবে। এরপর তিনি উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক, যুবদলের সহ-সভাপতি এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এই বিশাল রাজনৈতিক ইতিহাসের পর হঠাৎ একটি ভিন্ন দলে নাম আসা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি।

তবে এনসিপির পক্ষ থেকে ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফসা জাহান বলেন,
“আমরা একাধিকবার জুয়েল সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। এমনকি মঙ্গলবার রাতেও কথা হয়েছে। তখন তিনি বলেছিলেন তিনি অসুস্থ, দায়িত্ব নিতে পারবেন না। সে অনুযায়ী আমরা কমিটি তুলে নিয়েছি। কিন্তু এখন তিনি গণমাধ্যমে যা বলছেন, তা সত্য নয়।”

কমিটিতে আরও ছিলেন ৫ জন যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ২৫ জন সদস্য। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর যৌথ স্বাক্ষরে এই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

তবে হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে বারবার ফোন করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের পদঘোষণা ও তাৎক্ষণিক অস্বীকৃতি রাজনীতির একটি নতুন প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়—যেখানে এক পক্ষ প্রতিপক্ষকে বিব্রত করতে, বিভ্রান্তি ছড়াতে কিংবা দলে ভাঙন ধরাতে কৌশল হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেয়।

এই ঘটনাটি বিএনপির ভেতরেও কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
কারা এনসিপিকে এমন তথ্য দিল? কেন একজন দীর্ঘদিনের বিএনপি নেতার নাম এমন করে ব্যবহার করা হলো?

এনসিপির কমিটি এখন আপাতত বাতিল হলেও, এই ঘটনা যে স্থানীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের আলোড়ন তুলেছে, তা স্পষ্ট। আর আব্দুর রহিম জুয়েলের সরল প্রশ্ন—“আমি কেন বিএনপি ছাড়বো?”—তা আজ সামাজিক মাধ্যম থেকে চায়ের দোকানের আড্ডা পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি


News Card Generator