রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা বাংলামোটরে সোমবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ঘটে গেল চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে ঘটে এই ককটেল বিস্ফোরণ।
রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের নিচে দলটির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে ছোড়া হয় প্রাণঘাতী ককটেল। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠে গোটা এলাকা। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এতে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাংলামোটর মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়ার মুহূর্তেই ঘটে হামলাটি। রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের ১৬ তলায় অবস্থিত এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন দলের শীর্ষ নেতারা। তখনই আচমকা একটি সাদা রঙের হাইয়েস গাড়ি দ্রুতগতিতে সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে হঠাৎই ছোড়া হয় একটি ককটেল, লক্ষ্য করে এনসিপি নেতা-কর্মীদের দিকে। মুহূর্তের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় বোমাটি, আর গাড়িটি দ্রুত গতিতে সটকে পড়ে।
এ বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন তখন নিচে অবস্থান করছিলেন। তাঁর চারপাশে ভিড় করে ছিলেন ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী। ঠিক সেই সময়েই ঘটে হামলাটি।
আরিফুল আরও জানান, ককটেলটি কারো গায়ে সরাসরি না লাগলেও, তা খুব কাছেই পড়ে এবং বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে গুরুতর আহত হন এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের সংগঠক শফিকুল ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজারীবাগ থানা শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব সুমন হোসেন। এছাড়া এনসিপি অফিসের কর্মচারী মনিরও সামান্য আহত হন বিস্ফোরণের কারণে।
হামলার পর আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে। মুহূর্তের মধ্যে এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ককটেল হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা। একইসঙ্গে এর পেছনে কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন এনসিপির নেতারা।
ঘটনার প্রতিবাদে রাত পৌনে ১২টার দিকে হঠাৎ করেই বাংলামোটর মোড়ে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় এনসিপি। দলে দলে নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলে পুরো মোড়। তারা এ ঘটনার জন্য সরকারের ‘নিরাপত্তা ব্যর্থতা’কে দায়ী করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
এ ঘটনায় স্থানীয় থানার পক্ষ থেকেও তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক হামলা, তবে কারা এর পেছনে রয়েছে — তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এনসিপি দাবি করেছে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অগ্রগতিতে দলটি যে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে, সেটিই হয়তো এই হামলার পেছনে মূল কারণ। তারা এটিকে একটি কাপুরুষোচিত হামলা বলে উল্লেখ করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা ফের বাড়ছে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এই ধরনের ককটেল হামলা থেকে। রাজধানীর ব্যস্ত এলাকায়, একটি রাজনৈতিক দলের অফিস লক্ষ্য করে এভাবে প্রকাশ্যে হামলা নিঃসন্দেহে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ঘটনায় কেমন পদক্ষেপ নেয় এবং হামলাকারীরা কত দ্রুত আইনের আওতায় আসে — সেটিই এখন দেখার বিষয়।