এনামুল কেন নেই, নাঈম কেন আছেন—কী ব্যাখ্যা নির্বাচকদের

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ঝড় তুলেও ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি এনামুল হকের। দুই বছর পর ফিরলেন নাঈম শেখ। নির্বাচকদের ব্যাখ্যা ঘিরে উঠেছে প্রশ্নের ঝড়।..

ঘরোয়া ক্রিকেটে নজিরবিহীন ফর্মেও জাতীয় দলের ওয়ানডে স্কোয়াডে জায়গা পাননি এনামুল হক বিজয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ১৪ ম্যাচে ৪টি সেঞ্চুরি সহ ৮৭৪ রান করেও বাদ পড়েছেন তিনি। তার পরিবর্তে দলে ফিরেছেন প্রায় দুই বছর ধরে ওয়ানডে খেলেননি এমন একজন—মোহাম্মদ নাঈম শেখ।

আজ ঘোষিত ১৬ সদস্যের শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে দলে এনামুলের নাম না থাকায় ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সে এত ভালো থাকা একজনকে কেন বাদ দেওয়া হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। নির্বাচকদের দেওয়া ব্যাখ্যায় যেন আরও বাড়তি উত্তাপ ছড়িয়েছে এই বিতর্কে।

শুধু প্রিমিয়ার লিগ নয়, এনামুল জাতীয় লিগেও ছিলেন উজ্জ্বল। ৭ ম্যাচে করেছিলেন ৭০০ রান। তার ওপর ভিত্তি করেই তাকে ডাকা হয়েছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলে। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। চট্টগ্রামে একটি ইনিংসে করেছিলেন ৩৯ রান। এরপর শ্রীলঙ্কার গলে টেস্টে দুই ইনিংসেই এক অঙ্কের ঘরে আউট হন—শূন্য এবং ৪ রানে। খেলা চলাকালীন তার ব্যাটিংয়ে দেখা গেছে অস্বস্তি, আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটু শটে।

জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে এমন ব্যর্থতার কারণেই কি বাদ পড়েছেন বিজয়? এই প্রশ্নই উঠেছে সংবাদ সম্মেলনে। নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক সোজাসাপ্টা বলেন, “হ্যাঁ, এটা হতাশাজনক। তবে আমরা যাকেই নিই, তা দলের প্রয়োজনে নিই। কেউ সব জায়গায় পারফর্ম করবে না, বিজয়ের হয়তো একটু মিস হয়েছে।

তবে তিনি যোগ করেন, এটা কখনোই মানে নয় যে ঘরোয়া পারফর্মারদের আমরা দেখব না। বিজয় যদি ব্যর্থ হয়, তাই বলে অন্যদের উপেক্ষা করব, সেটা হবে না। আমাদের দল গঠনের ভিত্তিই হলো ঘরোয়ার পারফরম্যান্স, এবং সেটা আমরা চালিয়ে যাব।

বিজয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, “ব্যর্থতা খেলার অংশ। বিজয় যদি ব্যর্থ হন, তাও আমরা তাকে সিস্টেমে রাখব। জাকির, জয়—সবাই থাকবে এই কাঠামোর মধ্যেই। খেলোয়াড়দেরও নিজের ভুল শুধরে আসতে হবে। আমরা কাউকে একেবারে বাদ দেওয়ার পক্ষে নই।”

অর্থাৎ, এ মুহূর্তে জাতীয় দলের স্কোয়াডে জায়গা না পেলেও এনামুলের জন্য দরজা পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না—তবে তার উচিত ব্যাট হাতে আরও দৃঢ় বার্তা দেওয়া।

অন্যদিকে, একই প্রিমিয়ার লিগে ১১ ম্যাচে ২টি সেঞ্চুরিতে ৬১৮ রান করে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন বাঁহাতি ওপেনার নাঈম শেখ। ঘরোয়া লিগে পারফরম্যান্স ছাড়াও তার ব্যাটিং স্টাইলকেও গুরুত্ব দিয়েছেন নির্বাচকরা।

গাজী আশরাফ বলেন, আমরা দলে এমন খেলোয়াড় চাই, যারা ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে। তানজিদ আর পারভেজের পরিপূরক হিসেবে কাউকে দরকার ছিল। নাঈমকে আমরা আগেই জানিয়েছিলাম স্ট্রাইক রেট বাড়াতে। সেই অনুযায়ী সে কাজ করেছে। এখন সে ভালো ইন্টেনসিটিতে ব্যাট করছে।

অর্থাৎ, নাঈমের ঘরোয়া পারফরম্যান্স + ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ = জাতীয় দলের টিকিট।

এনামুল হক বিজয়ের বাদ পড়া আর নাঈমের ফিরিয়ে আনা—এই দুই ঘটনায় একটি বিষয় স্পষ্ট: ঘরোয়া পারফরম্যান্সে জাতীয় দলে সুযোগ মিলতে পারে, কিন্তু সেটা ধরে রাখতে হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা প্রমাণ করতে হবে।

নির্বাচকরা একদিকে ঘরোয়ার গুরুত্ব দিচ্ছেন ঠিকই, তবে সেটি চূড়ান্ত নয়। জাতীয় দলে জায়গা ধরে রাখতে হলে চাই মাঠে নির্ভরযোগ্যতা।

এনামুল হক বিজয়, যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মার, তার বাদ পড়া নিশ্চয়ই হতাশাজনক। কিন্তু নির্বাচকরা যেমন বললেন—“ব্যর্থতাও খেলার অংশ”, তেমনি এটাও স্পষ্ট—জাতীয় দলে ফিরতে হলে শুধু পরিসংখ্যান নয়, দরকার আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার সামর্থ্য।

এদিকে নাঈম শেখের প্রত্যাবর্তন যেন একটা বার্তাই দিচ্ছে: যারা ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করে এবং নিজেকে আপডেট করে, তারাই জায়গা করে নিতে পারে জাতীয় দলের স্কোয়াডে—even after a gap of two years!

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি


News Card Generator