জাতীয় স্বীকৃতি পেয়েও বছরের পর বছর সরকারিভাবে বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হাজারো ননএমপিও শিক্ষকেরা এবার আর চুপ করে বসে নেই। এবার তারা রাজপথে নেমেছেন “কাফনের কাপড় পরে মরতে প্রস্তুত” মনোভাব নিয়ে।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ অবস্থান থেকে ‘সম্মিলিত ননএমপিও ঐক্য পরিষদ’ ঘোষণা দিয়েছে—আমাদের আর পেছনের রাস্তা নেই। এমপিওভুক্তির ঘোষণা না এলে এবার আমরা মরতে রাজি!
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাওলানা ফরহাদ হোসেন তালুকদার অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেন—আগামীকাল রোববার আমরা কাফনের কাপড় পরে এই রাজপথেই থাকব। সরকার যদি আমাদের এমপিও না করে, আমরা আর ঘরে ফিরব না। প্রয়োজনে লাশ হয়ে তবেই ফিরব।তিনি জানান, মে মাসের পর জুনও শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস বা ঘোষণা নেই।
মাওলানা ফরহাদ বলেন—আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দেশের শিক্ষাখাতের সবচেয়ে মানবিক ও যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা আজ রাস্তায়। আর বসে থাকার সময় নেই। আগামীকাল সকাল থেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা ও আশেপাশের প্রত্যেকটি গলি অলিতে অলিতে শিক্ষকরা সমবেত হবেন।তিনি আরও উল্লেখ করেন, তারা ইতোমধ্যে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন, যা গত বুধবারই শেষ হয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবার জীবন দান করেও দাবি আদায় করতে হবে।
এদিন সকাল ১০টা থেকেই শতাধিক ননএমপিও শিক্ষক প্রেস ক্লাব এলাকায় জমায়েত হন।
তাদের দাবি—ননএমপিও শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ বছরের পর বছর বেতন পাচ্ছেন না, কারো সংসার চলছে ধার-দেনায়, কেউ চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অথচ তারা জাতীয়ভাবে স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন।
শিক্ষকদের দাবি, দেশে আন্দোলনরত অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনের চেয়ে এ দাবি অনেক বেশি যৌক্তিক ও মানবিক। কারণ, এটি শিক্ষকদের ব্যক্তিগত সুবিধা নয়, বরং শিক্ষা খাত ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্ব রক্ষার দাবি।
ননএমপিও শিক্ষকরা জোর দিয়ে বলছেন—রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, অথচ বেতন দেওয়া হচ্ছে না। এটা কেমন অদ্ভুত নীতি? রাষ্ট্রের এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা।
শিক্ষকদের বক্তব্য, তারা শুধু বেতন চান না, তারা চান প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা, শিক্ষা কার্যক্রমের গতি এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ ভবিষ্যৎ।
শিক্ষকদের এমন কঠোর হুঁশিয়ারিতে প্রশাসনের টনক নড়ে কি না, তা এখন দেখার বিষয়। তবে তারা জানিয়ে দিয়েছেন—এই আন্দোলন থামবে না। আগামীকাল কাফনের কাপড় পরে অবস্থান শুরু করলেও, এরপর কী কর্মসূচি আসছে, তা আরও ভয়াবহ হতে পারে।
ননএমপিও শিক্ষকদের এ আন্দোলন এখন আর কেবল একটি দাবি নয়, এটি পরিণত হয়েছে একটি বাঁচা-মরার লড়াইয়ে।
যেখানে শিক্ষকরা বলছেন—এমপিও না দিলে মরেই যাবো, কিন্তু মাথা নত করব না।