রাজনীতিতে অংশগ্রহণ সবার অধিকার—কিন্তু যদি নির্বাচন হয় এককভাবে কোনো দল বা গোষ্ঠীকে সামনে রেখে, তবে তা গণতন্ত্রের প্রাণকেই হত্যা করার সামিল। এমনই মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম স্পষ্ট করে বলেছেন, “নির্বাচনের তারিখ একক দল বা ব্যক্তি বিশেষের সঙ্গে বসে নির্ধারণের চেষ্টা, দেশের বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি একটি বিমাতাসুলভ আচরণ।”
শনিবার, ২১ জুন, ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক পুনর্মিলনী সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
আরিফুল ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রের বর্তমান সংকট কোনো একক দল দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। এ সংকট কেবল ক্ষমতা হস্তান্তরের নয়—বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতির ব্যর্থতার ফল।”
তিনি মনে করিয়ে দেন, আজকের বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মানুষের আস্থা রাজনীতিতে নেই, প্রশাসনে নেই, এমনকি নির্বাচন প্রক্রিয়াতেও নেই। এই মুহূর্তে একটি পক্ষকে বাদ দিয়ে গঠিত কোনো পরিকল্পনা মানুষের চোখে পক্ষপাতদুষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই বিবেচিত হবে।
এনসিপি বলছে, এই রাজনৈতিক অচলাবস্থার একমাত্র সমাধান হতে পারে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকার গঠন। এই অন্তর্বর্তী সরকার গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য দায়িত্ব পালন করবে এবং সেখানে দেশের সব রাজনৈতিক দলের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, “আমরা চাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এমন এক অভিভাবকসুলভ ভূমিকা পালন করুক, যা সকল রাজনৈতিক মত-পথ ও জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।
আরিফুল ইসলাম তার বক্তব্যে আরও বলেন, ভবিষ্যতের রাষ্ট্রকাঠামো গঠনের প্রক্রিয়ায় শুধু রাজনৈতিক দল নয়, বরং শ্রমিক, ছাত্র, তরুণ, নারীসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের মতামত প্রতিফলিত হতে হবে। তাই তিনি গণভোটের দাবি তোলেন, যাতে সরাসরি জনগণের মতামত জানা যায় এবং তা রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, “শুধু দলীয় দরজায় আলোচনা নয়—জনগণকে সত্যিকারের অংশীদার হিসেবে নিয়ে এগোতে হবে। রাষ্ট্রকে নতুন করে গড়ার এটাই সময়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই বার্তা একাধিক বিষয়ে আলোকপাত করে—গণতন্ত্রের প্রকৃত অর্থ, নেতৃত্বের যৌক্তিকতা, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, জনগণের মতামতের মর্যাদা। নির্বাচন কোনো একক ইচ্ছার ফল নয়, এটি হতে হবে সম্মিলিত চিন্তার প্রতিফলন। আর সেই লক্ষ্যে এনসিপির দাবি স্পষ্ট—সব দলের অংশগ্রহণ, জনগণের মতামতের প্রতিফলন, এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়া।