সিলেটের জাফলং এলাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার সরকারি সফর ঘিরে উত্তেজনা, বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে একযোগে নড়েচড়ে বসেছে দল ও প্রশাসন।
ঘটনার সূত্রপাত গত রোববার, ১৪ জুন, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে। বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা — বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ ফাওজুল কবির খান — জাফলংয়ের পাথর উত্তোলন কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শনে যান। ভ্রমণ শেষে স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমের উদ্দেশে তাঁরা এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন:
“সিলেট অঞ্চলে আর কোনো পাথর কোয়ারী চালু করা হবে না, লিজও দেওয়া হবে না।”
এই বক্তব্য প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় জনগণ, যারা সরাসরি পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত এবং অনেকেই জীবিকার প্রধান মাধ্যম হিসেবে এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। রাস্তায় নেমে আসে স্থানীয় শ্রমিক, পাথর ব্যবসায়ী ও তাদের সংগঠনের নেতারা। তাদের অভিযোগ, নতুন কোয়ারী নিষিদ্ধ হলে তারা বেকার হয়ে পড়বে এবং পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে।
এই ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভ দ্রুত উত্তপ্ত রূপ নেয়। উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকানো হয় জাফলংয়ের মধ্যপথে। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে সরকারদলীয় গাড়িবহর অবরুদ্ধ থাকে, পরিস্থিতি চরমে পৌঁছে যায়। পুলিশ ও বিজিবি যৌথভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বহু চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উপদেষ্টাদের নিরাপদে বের করে আনা হয়।
এই বিক্ষোভের মূল পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খান — এমন অভিযোগ উঠে আসে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। ঘটনাটি নজরে আসার পর যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়।
পরদিন রোববার, ১৫ জুন, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়
দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী যেন তার সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখেন — এই মর্মে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।”
এই সিদ্ধান্ত সিলেট তথা সারাদেশে যুবদলের অভ্যন্তরে আলোড়ন তুলেছে। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়াকে অনেকে প্রশংসা করলেও, স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকের মতে, কেন্দ্র শুধু 'অপকর্ম' দেখলো, কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের অবহেলিত বাস্তবতা বুঝতে চায়নি।
এদিকে পরিবেশবাদী মহল উপদেষ্টাদের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলছে, “অবৈধ পাথর কোয়ারীর কারণে পরিবেশ হুমকির মুখে। এখন সময় এসেছে বিকল্প পর্যটন উদ্যোগে বিনিয়োগের।
জাফলংয়ের ঘটনাটি শুধুই একটি স্থানীয় বিক্ষোভ নয় — এটি বড় এক প্রশ্ন তুলছে: উন্নয়ন বনাম জীবিকা।
যেখানে সরকার পরিবেশ রক্ষার নাম করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেখানেই কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত শ্রমিকরা। আর রাজনৈতিক দলগুলো, জনসংযোগ ও দায়মুক্তির মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে ফিরছে।