রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়: স্বচ্ছতার অভাব কেন?
বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য প্রতি বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল বিদেশি অনুদান বা এনজিও থেকে তহবিল নিতে পারে না। তবে বাস্তবে রাজনৈতিক দলগুলোর আয়ের প্রকৃত উৎস ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তিগত অনুদানের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে, তবে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ লাখ এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান নেওয়া যায়। তবে এর বেশি হলে তা চেকের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়: পরিসংখ্যান কী বলে?
২০২৪ সালে বিএনপি তাদের ২০২৩ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে। হিসাব অনুযায়ী:
- 
বিএনপির আয়: ১ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ১৫১ টাকা। 
- 
বিএনপির ব্যয়: ৩ কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৭০ টাকা। 
অন্যদিকে, ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ২৭ কোটি ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। জাতীয় পার্টির আয় ছিল ৩ কোটি ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩১ টাকা, ব্যয় ১ কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৫ টাকা।
প্রশ্ন হচ্ছে, দলগুলোর আয়ের প্রধান উৎস কী? বেশিরভাগ দলই সদস্যদের চাঁদা এবং শুভানুধ্যায়ীদের অনুদানকে মূল উৎস বলে দেখালেও, বিশাল ব্যয়ের উৎস নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।
নতুন রাজনৈতিক দলের বিশাল খরচ: উৎস কী?
সম্প্রতি তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল 'জাতীয় নাগরিক পার্টি' (এনসিপি)-এর বিশাল ব্যয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দলটি মনিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিশাল সমাবেশ করেছে, ঢাকায় অভিজাত অফিস স্থাপন করেছে, হেলিকপ্টারে গণসংযোগ চালিয়েছে এবং পাঁচতারা হোটেলে ১৩০০ মানুষের জন্য ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে। এত ব্যয়বহুল আয়োজনের অর্থের উৎস নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তি তাদের অনুদান দিয়েছেন, তবে তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হয়নি। অন্যদিকে, দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন জানিয়েছেন, দলীয় নিবন্ধনের সময় আয়-ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ হিসাব দাখিল করা হবে।
নতুন দল নিবন্ধনের শর্তাবলি
বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৪টি। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শেষ সময় ২০ এপ্রিল। কোনো দল নিবন্ধন পেতে হলে নিচের তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হবে:
- 
স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে অন্তত একটি আসনে বিজয়ী হওয়া। 
- 
নির্বাচনে মোট ভোটের কমপক্ষে ৫% অর্জন করা। 
- 
কেন্দ্রীয় কমিটিসহ ১/৩ জেলায় অফিস থাকা এবং ১০০টি উপজেলা বা থানায় অন্তত ২০০ ভোটার সদস্য থাকা। 
এছাড়াও, ৩৩% নারী সদস্য নিশ্চিত করা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নেতৃত্ব গঠনের নিয়ম মানতে হবে। এনসিপি এসব শর্ত পূরণ করেই নিবন্ধন নেবে বলে জানিয়েছে।
রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা কতটা জরুরি?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা না থাকলে কালো টাকার প্রবাহ বেড়ে যাবে এবং গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "রাজনৈতিক দলগুলোর অডিট রিপোর্টে প্রকৃত আয়-ব্যয়ের তথ্য থাকে না। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে দলগুলোর অনুদানের সব তথ্য প্রকাশ করা উচিত।"
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন, যে দল জনগণের জন্য কাজ করে, তারা জনসাধারণের কাছ থেকেই তহবিল পায়। অন্যদিকে, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, "যে কোনো রাজনৈতিক দলের উচিত তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা, না হলে প্রশ্ন উঠবে।"
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সময়ের দাবী। নির্বাচন কমিশনের আরও কঠোর ভূমিকা নেওয়া উচিত, যাতে কোনো রাজনৈতিক দল আয়-ব্যয়ের তথ্য গোপন করতে না পারে। গণতন্ত্রের স্বার্থে এবং জনস্বার্থে রাজনৈতিক অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এখন অপরিহার্য।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			