close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

দ্বিতীয় দফার সপ্তম দিনের বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে নিয়োগ কমিটি, দ্বিকক্ষ সংসদ ও প্রধানমন্ত্রী মেয়াদে সীমা নিয়ে প্রস্তাব। বিএনপি কিছুতে রাজি, কিছুতে আপত্তি জানিয়েছে।..

রাজনৈতিক সংস্কার এবং সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়ায় আরও এক ধাপ এগোল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ রবিবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার সপ্তম দিনের এই বৈঠকটি নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে।

বৈঠকের নেতৃত্বে ছিলেন কমিশনের সহ-সভাপতি এবং খ্যাতিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। এদিন আলোচনার কেন্দ্রে ছিল কয়েকটি জটিল ও বিতর্কিত ইস্যু— যেমন, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালুর সম্ভাবনা, উচ্চকক্ষের গঠন ও কার্যপ্রক্রিয়া এবং উচ্চকক্ষের সাংবিধানিক ভূমিকা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আজকের আলোচনায় বেশকিছু ‘সংবেদনশীল প্রস্তাব’ উঠে এসেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে সাংবিধানিক নিয়োগ কমিটি গঠনের নতুন চিন্তা। পূর্বের আলোচনায় ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি)’ গঠনের যে প্রস্তাব ছিল, তা থেকে কমিশন পিছিয়ে এসেছে। পরিবর্তে ‘নিয়োগ কমিটি’ গঠনের পরিকল্পনা তোলা হয়েছে, যাতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নিয়োগ নিশ্চিত করা যায়। তবে বিএনপি এ প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে, তাদের আশঙ্কা— এতে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে, যা রাজনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। বিএনপি এতে শর্তসাপেক্ষে সম্মতি জানিয়েছে, যা আলোচনার অগ্রগতির একটি বড় সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এছাড়াও, উচ্চকক্ষ বা ‘সিনেট’-এর গঠন, নির্বাচন ও দায়-দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষে সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবী ও প্রদেশভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে সংসদের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় আরও বৈচিত্র্য আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আগের আলোচনায়, সংবিধানের মূলনীতি সংশোধনে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। বিশেষ করে ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার এবং ১০০ আসনের ‘নারী সংরক্ষিত আসন’ প্রস্তাবনা পেয়েছে বেশিরভাগ দলের সমর্থন। একাধিক রাজনৈতিক দলের বক্তব্য অনুযায়ী, এই ধরনের সংশোধন হলে সংসদীয় গণতন্ত্র আরও কার্যকর হবে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েও আলাপ-আলোচনায় এগিয়েছে দলগুলো। বেশিরভাগ দল রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কিছুটা বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে, তবে নির্বাহী ক্ষমতা তার হাতে না দেওয়ার ব্যাপারেও সবাই সতর্ক।

উল্লেখ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম দফায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, সিপিবি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ মোট ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৪৫টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় দফার আলোচনায়ও এই ধারাবাহিকতা রক্ষা হচ্ছে এবং দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই আলোচনাগুলো বাস্তব প্রস্তাবে রূপ নেয়, তাহলে তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাবে।

No se encontraron comentarios