ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলার মাটি থেকে উঠে আসা এই মানুষটি কেবল বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে সমাদৃত। তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি নোবেল পুরস্কার ছাড়াও বিশ্বের আরও দুই সম্মানজনক পুরস্কার – আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল এওয়ার্ড এবং মার্কিন কংগ্রেশনাল এওয়ার্ড – অর্জন করেছেন। ইতিহাসে মাত্র ১২ জন ব্যক্তি এই তিনটি পুরস্কার অর্জন করতে পেরেছেন, এবং ড. ইউনূস তাঁদের মধ্যে একজন। তবুও, আজও বাংলাদেশের ৮৩% মানুষ জানেন না, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কে। কেন এই গৌরবময় অধ্যায়টি আমাদের মধ্যে অজানা থেকে যায়?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর অজানা কীর্তি
ড. ইউনূস বিশ্বব্যাপী পরিচিত মূলত মাইক্রো-ফাইন্যান্স এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণার জন্য। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে। তবে, অনেকেই জানেন না যে এই ব্যাংকের তিনি একজন উদ্যোক্তা হলেও এর এক টাকার মালিকও নন। গ্রামীণ ব্যাংকের ২৫% মালিকানা সরকারের এবং বাকিটা সাধারণ গ্রাহকদের।
এছাড়া, গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি একই দর্শন মেনে চলেছেন। তিনি এমনভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছেন যাতে কেউ ব্যক্তিগতভাবে মালিক হতে না পারে। তাঁর এই চিন্তাধারা তাঁকে কেবল একজন সফল উদ্যোক্তা নয়, বরং একজন দার্শনিক এবং মানবতাবাদী করে তুলেছে।
কেন ড. ইউনূস বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য?
ড. ইউনূসের দর্শন কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, সম্পদের অযৌক্তিক কেন্দ্রীকরণ সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে। তাঁর ভাষায়, “টাকা কামানোতে আছে সুখশান্তি, অন্যের উপকারে আছে প্রশান্তি।” এই চিন্তাধারার ভিত্তিতে তিনি এমনসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, যেগুলো অলাভজনক এবং জনগণের মালিকানাধীন।
বাংলাদেশে এমন আর কোনো ব্যক্তি নেই, যিনি একই সঙ্গে বিল গেটসের মতো ধনীদের বন্ধু এবং বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষের সেবক হতে পেরেছেন। অথচ আমরা আজও ড. ইউনূসকে সম্মান করতে শিখিনি।
ড. ইউনূসের সফলতার পেছনের মানুষ
ড. ইউনূসের মাইক্রো-ফাইন্যান্স মডেল সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। তাঁর নামে ১০৭টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার রয়েছে। তিনি যখন কথা বলেন, তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য মানুষ ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার খরচ করে। তাঁর বক্তৃতাগুলো মানবিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র বিমোচনের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়।
কোথায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ?
ড. ইউনূসকে যদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হতো, তবে আজ বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত। অথচ আমাদের দেশের মানুষ এখনও বিশ্বাস করে যে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদ দিয়ে তিনি লাভ করেন। আসল সত্য হলো, তিনি গ্রামীণ ব্যাংক বা গ্রামীণ টেলিকম থেকে এক পয়সাও নেন না। বরং তাঁর আয়ের উৎস হলো আন্তর্জাতিক বক্তৃতা ও পরামর্শ প্রদান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেবল একজন ব্যক্তি নন; তিনি একটি আদর্শ। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, ব্যক্তিগত লাভের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানবতার সেবা করা সম্ভব। আসুন, আমরা তাঁকে যথাযথ সম্মান করি এবং তাঁর কাজ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করি। ড. ইউনূসের মতো মানুষ আমাদের দেশকে বিশ্বের বুকে গর্বিত করতে পারে। আমাদের উচিত তাঁকে নিয়ে গর্ব করা, তাঁকে সম্মান জানানো।
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন
 লেখক ও সাংবাদিক
					
					
					
					
					
					
    
					
					
			
					
					
					
					
					
					
					
				
				
				
				没有找到评论
							 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			