এক দশকের বিতর্কের অবসান
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা এই মামলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বিতর্ক ও আইনি লড়াই। মামলায় অভিযোগ ছিল, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের প্রাপ্য লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ড. ইউনূসসহ প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তারা।
তবে, আপিল বিভাগ বলেছে—যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই মামলাটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ফলে সেটি আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।
হাইকোর্টে আবেদন খারিজ, আপিলে মিললো ন্যায়বিচার
২০২৩ সালের ৮ জুলাই ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের ছয় শীর্ষ কর্মকর্তা অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। তবে শুনানি শেষে ২৪ জুলাই বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের বেঞ্চ আবেদন খারিজ করে দেন।
পরবর্তীতে সেই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন ইউনূস ও অন্যান্যরা। ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে পূর্ণাঙ্গ আপিল শুনানির নির্দেশ দেন।
আচমকা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে আইনি প্রশ্ন
আপিলকারীদের আইনজীবী অভিযোগ করেন, বিচারিক আদালতে মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারিত থাকলেও, তাদের না জানিয়েই ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। যা আদালত ও ন্যায়বিচারপ্রক্রিয়ার পরিপন্থী বলে দাবি করেন তারা।
চার্জশিট দাখিলের পর নতুন মোড়
তদন্তে দুদক জানায়, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং সেই টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তর করেছেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আছাদুজ্জামানের আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয় এবং ২৯ জানুয়ারি কমিশনের বৈঠকে ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও রায়ের তাৎপর্য
বুধবারের রায়ে আপিল বিভাগ স্পষ্টভাবে বলেন, মামলাটির প্রসিডিউরাল দুর্বলতা রয়েছে এবং অপরাধ প্রমাণে যথাযথ তথ্য ও সাক্ষ্য উপস্থাপিত হয়নি। ফলে মামলাটি বাতিল করা হয়েছে।
জনমনে প্রতিক্রিয়া
রায় ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই এটিকে ন্যায়বিচারের বিজয় হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আইন সবসময় এক রকমভাবে প্রয়োগ হয় না।
সংক্ষিপ্ত তথ্য:
-
মামলার অভিযোগ: গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের প্রাপ্য ২৫.২২ কোটি টাকা আত্মসাৎ
-
আসামি: ড. ইউনূসসহ ১৪ জন
-
চার্জশিট দাখিল: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
-
মামলা বাতিলের রায়: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, আপিল বিভাগ