close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

চোখের সামনে খামেনির অন্তরঙ্গ মহল ফাঁকা করে দিচ্ছে ইসরায়েল..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অন্তরঙ্গ মহল ক্রমশই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। একের পর এক বিমান হামলায় তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সামরিক ও গোয়েন্দা উপদেষ্টারা নিহত হওয়ায় এক নিঃসঙ্গ রাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়ি..

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনের ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান আমির আলী হাজিজাদে ও গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি। তাঁরা সবাই খামেনির ‘ইনার সার্কেল’ বা অন্তরঙ্গ মহলের অংশ ছিলেন, যারা জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক নীতিমালা ও সামরিক কৌশল নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখতেন।

খামেনির নেতৃত্বাধীন এ মহলটি সাধারণত ১৫-২০ জন উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টার সমন্বয়ে গঠিত। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সামরিক কমান্ডার, শীর্ষস্থানীয় আলেম এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কার্যালয় থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁদের ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একটি সূত্র রয়টাসকে বলেছে, ‘এই মুহূর্তে খামেনি ভয়াবহ নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন। তাঁর চারপাশে যাঁরা থাকতেন, একের পর এক তাঁদের হারিয়ে যাচ্ছেন। ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বড়।’

বিশ্লেষক অ্যালেক্স ভাটাঙ্কা বলেন, ‘খামেনি চূড়ান্তভাবে একগুঁয়ে, কিন্তু একই সঙ্গে খুবই সতর্ক। তাঁর সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হচ্ছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের টিকে থাকা নিশ্চিত করা।’

এত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও খামেনি ইরানের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজের হাতে রেখেছেন। দেশের সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগ, এমনকি প্রেসিডেন্ট নিয়ন্ত্রণাধীন নানা সংস্থাতেও তাঁর সরাসরি প্রভাব রয়েছে। যেকোনো ছোট-বড় সিদ্ধান্তেও তাঁর দপ্তরের অনুমোদন দরকার হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

তবে খামেনির অনুপস্থিত উপদেষ্টাদের জায়গা পূরণে এগিয়ে এসেছেন তাঁর ছেলে মোজতবা খামেনি। গত দুই দশকে তিনি বিপ্লবী গার্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এখন মূল সমন্বয়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অনেকেই মনে করেন, এই মধ্যমপদে থাকা আলেম ভবিষ্যতে তাঁর পিতার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।

তাঁর সঙ্গে আরও রয়েছেন খামেনির কার্যালয়ের নিরাপত্তা উপদেষ্টা আলী আসগর হেজাজি, দপ্তরের প্রধান মোহাম্মদ গোলপায়েগানি এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর ভেলায়েতি ও কামাল খারাজি। তাঁরা এখন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়গুলোতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন।

কিন্তু যেসব পদে সামরিক কৌশল ও গোয়েন্দা সমন্বয় প্রয়োজন, সেইখানে আইআরজিসি নেতাদের অভাব স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো, এই বাহিনীই ইরানের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি আঞ্চলিক আধিপত্যের রূপরেখা তৈরি করে থাকে।

সর্বশেষ সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যখন ইসরায়েল ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষ জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদেরও টার্গেট করেছে। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এক হামলায় এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতা হারিয়েছেন গত ডিসেম্বরে।

সার্বিকভাবে ইঙ্গিত মিলছে, ইসরায়েল কেবল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করতেই নয়, বরং সরাসরি সর্বোচ্চ নেতৃত্ব কাঠামোকেও ভেঙে দিতে সক্রিয়ভাবে আঘাত হানছে।

এমন এক সময়ে, যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং অভ্যন্তরীণভাবে অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হচ্ছে, তখন খামেনির এই ভঙ্গুর উপদেষ্টা কাঠামো তাঁর নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator