নতুন মোড় ছাত্র রাজনীতিতে: নিহত ছাত্রদল নেতা সাম্যর ভাই সাগরের এনসিপিতে যোগদান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নিহত নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর মৃত্যু নিয়ে এখনও সরগরম রাজনীতির মাঠ। তার রক্তাক্ত বিদায়ের পর এবার সামনে এল এক নতুন ঘটনা—সাম্যর বড় ভাই সর্দার আমিরুল ইসলাম সাগর আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-তে। রোববার ঘোষিত এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর সমন্বয় কমিটির সদস্য হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই যোগদান শুধু একটি পার্টি পরিবর্তন নয়, বরং রাজনীতির ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সাগরের রাজনৈতিক অতীত: ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার ও প্রত্যাবর্তন
সর্দার আমিরুল ইসলাম সাগর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৭ সালের আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট দেন তিনি। এর পরপরই তাকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে পুনরায় সংগঠনে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
তাঁর এই ব্যতিক্রমী অবস্থান ও ইতিহাস তাকে ছাত্রদলের ভেতরেও একটি বিতর্কিত ও আলোচিত চরিত্রে পরিণত করেছিল। আর এখন ছাত্রদল থেকে বের হয়ে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির নতুন ধারায় প্রবেশ করায় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
নিহত ভাই সাম্যর স্মৃতি: আন্দোলনের অনুপ্রেরণা
সাম্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। চলতি বছরের ১৩ মে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন তিনি। এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ছাত্র রাজনীতিতে প্রবল ক্ষোভ ও আন্দোলনের জন্ম দেয়।
ছাত্রদল এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে এক সপ্তাহ ধরে শাহবাগে লাগাতার অবরোধ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে তারা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তা এখনও থেমে যায়নি।
এই আন্দোলনে সাম্যর মতোই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন সাগরও। ভাইয়ের হত্যার বিচার, রাজনৈতিক শুদ্ধতা এবং গণতন্ত্রের দাবিতে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ সোচ্চার ছিলেন।
এনসিপিতে যোগদানের পেছনের কারণ: জাতীয়তাবাদের নতুন পথ
সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমিরুল ইসলাম সাগর বলেন, “২০১৯ সালে ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলাম। এরপর আর কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলাম না। তবে আমি সবসময়ই জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এসেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বাবা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাদের একজন ছিলেন। তাই জাতীয়তাবাদ আমার রক্তে। তবে গতানুগতিক দলীয় গণ্ডির বাইরে গিয়ে এখন সময় এসেছে নতুনভাবে চিন্তা করার। সেই ভাবনা থেকেই আমি এনসিপিতে যোগ দিয়েছি।”
সাগরের আগমন কি এনসিপির জন্য টার্নিং পয়েন্ট?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপি বর্তমানে যে জাতীয়তাবাদী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে, তাতে তরুণ ও শিক্ষিত নেতৃত্বের দরকার ছিল। সাগরের মতো একজন অভিজ্ঞ ছাত্রনেতা, যিনি ব্যক্তিগতভাবে ভাইয়ের মৃত্যুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং একইসঙ্গে জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী, তিনি এনসিপির জন্য এক শক্তিশালী সংযোজন হতে পারেন।
এনসিপির পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, সাগরের অন্তর্ভুক্তি সংগঠনকে তরুণ সমাজে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে এবং রাজনৈতিকভাবে অধিক গ্রহণযোগ্যতা এনে দেবে।
রাজনীতির নতুন বাস্তবতা
সাম্যর মৃত্যু যেমন ছাত্র রাজনীতির জগতে এক তীব্র নাড়া দিয়েছিল, তেমনি তার ভাই সাগরের এনসিপিতে যোগদানও জাতীয় রাজনীতিতে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। বিএনপির ছাত্রসংগঠন থেকে বের হয়ে এনসিপিতে প্রবেশ, সেটা নিছক দলবদল নয়—বরং জাতীয়তাবাদী রাজনীতির গতিপথে এক নতুন বাস্তবতা।
সাগরের কথায় যেমন উঠে আসে, “শুধু রাজনীতি করার জন্য রাজনীতি নয়, বরং আদর্শিকভাবে একটা সত্যিকারের জাতীয় প্ল্যাটফর্ম গড়ার লক্ষ্যেই এনসিপিতে এসেছি।