close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

চাপে পড়েছেন ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের দেড় লাখের বেশি নেতাকর্মী এখন চরম অনিশ্চয়তায়। ভারত সরকার অবৈধদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ায় দেশ ছাড়ার হুমকির মুখে পড়েছেন তারা। ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি আরও ভ..

আশ্রয় হারাচ্ছেন ভারতের মাটিতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের দেড় লাখ নেতাকর্মী

বাংলাদেশে ক্ষমতা হারানোর পর যে হাজারো আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মী প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের এখন সেই আশ্রয়ও আর নিরাপদ নয়। ভারতের বর্তমান সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় ভয় আর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন আওয়ামী লীগের দেড় লাখেরও বেশি নেতাকর্মী।

গত ৯ মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী পরিবার-পরিজন নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। কেউ কেউ হোটেল, কেউ মফস্বল শহরের বাড়ি ভাড়া করে, আবার কেউ সীমান্তবর্তী গ্রামে বসবাস করছিলেন। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি যে নির্দেশনা জারি করেছে, তাতে বলা হয়েছে – অবৈধ বসবাসকারীদের দ্রুত ভারত ছাড়তে হবে। ফলে এসব বাংলাদেশি নেতাকর্মীদের মাথার উপর এবার ভেসে উঠেছে ফেরার অনিশ্চয়তার কালো মেঘ।

বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত সরাসরি আওয়ামী লীগ নেতাদের ধরপাকড় শুরু করেনি, তবে তাদের ‘অবৈধ বিদেশি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা শুরু করেছে। আগামী আগস্ট থেকে বড় পরিসরে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে সময় গুনছেন পলাতকরা—কে কখন ধরা পড়ে, কে কখন পুশব্যাকের মুখোমুখি হন।

এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার ১০ মে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, যার ফলে দলটির পলাতক নেতাদের দেশে ফেরার পথ আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা স্বীকার করেছেন যে দেশে এখনো ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়নি। তারা বলেছেন, “আমরা এখনও জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। দেশে ফিরলেই হয়তো গ্রেপ্তার, নির্যাতন বা খুনের শিকার হতে পারি।”

এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ভারত থেকে পশ্চিমা দেশ—বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে অন্তত ৫০ জন বড় মাপের নেতা ভারত ছাড়িয়ে অন্য দেশে পৌঁছেছেন। বাকিরাও ভিসা সংগ্রহ, শরণার্থী আবেদনসহ নানা উপায়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত।

তবে এটা শুধু রাজনীতিকদের বিষয় নয়—ভারতে আশ্রয় নেওয়া অনেক সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও বিতর্কিত আমলাও এখন চাপের মুখে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ না করা হলেও জানা গেছে, অনেক সাবেক এমপি, মন্ত্রী, এবং ক্ষমতাসীন আমলাও ভারতে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।

বিশেষ করে শেখ হাসিনা নিজেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ পেয়েছে। তার উপস্থিতি যেন অন্যদের সাহস দিচ্ছে, কিন্তু সরকারিভাবে কেউ এই তথ্য নিশ্চিত করেনি।

বর্তমান ভারতীয় সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, যদি কেউ বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে থাকেন, তাহলে তাকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা কারও রাজনৈতিক পরিচয় দেখি না। অবৈধ হলে সে ভারত ছাড়বে—এটাই নীতি।”

এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে—আওয়ামী লীগের এত বড় সংখ্যক নেতা-কর্মী কী করবেন? তাদের যদি দেশে ফেরা না যায়, আর ভারতে থাকাও না যায়, তাহলে পরবর্তী গন্তব্য কী?

অনেকেই বলছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হতে পারে একমাত্র উপায়। তবে রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় সেই পথেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, আগামী আগস্টের পর ভারতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য সময় হতে পারে সবচেয়ে বিপজ্জনক। আর ভারত যদি আরও কঠোর হয়, তবে দেশে না ফিরেই তারা নতুন কোনো দেশে পালানোর মরিয়া চেষ্টা করবে—সেটাই এখন সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।


সংক্ষেপে মূল পয়েন্টগুলো:

  • ভারতের ৫টি রাজ্যে আশ্রিত আছেন দেড় লাখেরও বেশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।

  • ভারত সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানে।

  • আগস্ট থেকে গ্রেপ্তার অভিযান আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।

  • অন্তত ৫০ জন নেতা ইতোমধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপে চলে গেছেন।

  • দেশে ফেরা এখনো নিরাপদ নয় বলেই মনে করছেন নেতারা।

  • ভারতও রাখতে চায় না, ফলে তৃতীয় দেশে পালানোর প্রস্তুতি।

এই রিপোর্টের প্রতিটি তথ্যই তুলে ধরছে – পালিয়ে বাঁচা যতটা কঠিন, ততটাই কঠিন সেই পালানোর পর আশ্রয় ধরে রাখা। ভারতের ভূমিকা এখন ঠিক কতটা কঠোর হয়, তার ওপর নির্ভর করছে হাজারো জীবনের ভাগ্য।

کوئی تبصرہ نہیں ملا