close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

বৃষ্টি-বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
পাকিস্তানে টানা বর্ষণ আর আকস্মিক বন্যায় শিশু-বৃদ্ধসহ প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাইবার পাখতুনখোয়া, আবহাওয়া অফিস বলছে—এখনও থামেনি বিপদের ঘণ্টা।..

পাকিস্তানে টানা ভারী বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় সৃষ্ট দুর্যোগ যেন কোনোভাবেই থামছে না। গত কয়েক দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে যাওয়া এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৫ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে, প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে কিংবা দেওয়াল ধসে নিহত হয়েছেন এসব মানুষ। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা গেছে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার কিছু অংশে, যেখানে শিশুসহ বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এই দুর্যোগ।

আফগানিস্তান সীমান্তঘেঁষা খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখানে ইতোমধ্যেই ২১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে অন্তত ১০ শিশু। আকস্মিক বন্যায় ঘুমন্ত অবস্থায় অনেকেই ভেসে গেছেন, বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ। পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট স্রোতে ভেঙে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সময়মতো কোনো পূর্বাভাস না পাওয়ায় প্রাণহানি আরও বেড়েছে।

দেশটির অন্যতম জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবেও কম ভয়াবহতা দেখা দেয়নি। সেখানে দেওয়াল ধসে অন্তত আট শিশু মারা গেছে। সর্বমোট প্রাণহানির সংখ্যা এই প্রদেশে ১৩। বৃষ্টিতে দুর্বল বাড়িঘরগুলো হঠাৎ ধসে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে। বন্যার পানি প্রবেশ করেছে বহু নিম্নাঞ্চলে, কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় সিন্ধু ও বালোচিস্তান প্রদেশেও ভারী বৃষ্টির ফলে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি। ইতোমধ্যে উদ্ধারকাজে নেমেছে সেনাবাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা। তবে দুর্বল অবকাঠামো ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে সহায়তা পৌঁছাতে সময় লাগছে।

পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সংস্থাটি জানিয়েছে, অন্তত আগামী শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে এবং এর ফলে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকিও রয়ে গেছে। শুধুমাত্র রোববারেই পাঞ্জাবের বিভিন্ন অংশে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে — লাহোর বিমানবন্দর এলাকায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন দুর্যোগ নয়। পাকিস্তান এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মাসেও প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ৩২ জন। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে দেশটি এমন দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। অথচ যথাযথ প্রস্তুতির ঘাটতি এবং দুর্বল অবকাঠামো পরিস্থিতিকে করে তুলেছে আরও ভয়াবহ।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। বহু এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (NDMA) পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও সহায়তার জন্য এগিয়ে আসছে বলে জানা গেছে।

বৃষ্টি ও বন্যার এমন ভয়াবহতা পাকিস্তানকে আবারও দেখিয়ে দিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কতোটা বাস্তব ও ধ্বংসাত্মক হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র ত্রাণ নয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নই পারে ভবিষ্যতের দুর্যোগ রুখতে।

कोई टिप्पणी नहीं मिली