close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রীকে হত্যা-ধর্ষণের হুমকি ৪ নেতার..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) নেত্রী সুমাইয়া আক্তারকে হত্যার ও ধর্ষণের হুমকি, অপহরণ এবং হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে সংগঠনের চার শীর্ষস্থানীয় নেতা রয়েছেন। ঘটনায় ছা..

সিলেটের ছাত্র রাজনীতিতে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ (বৈছাআ)-এর একজন শীর্ষ নেত্রী সুমাইয়া আক্তার সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেছেন সংগঠনেরই চারজন শীর্ষ নেতা ও আরও অজ্ঞাত আটজনের বিরুদ্ধে। মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ—হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি, অপহরণের চেষ্টা এবং হামলার মতো অপরাধ।

গতকাল বুধবার (১৪ মে) সিলেট মহানগর হাকিম দ্বিতীয় আদালতে এই মামলা দায়ের করেন সুমাইয়া আক্তার, যিনি সংগঠনটির সিলেট জেলা আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নিজেই সাংবাদিকদের কাছে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সুমাইয়ার অভিযোগ অনুযায়ী, গত ৭ মে বিকেল ৩টার দিকে সিলেট নগরের কিনব্রিজ সংলগ্ন সারদা হলের সামনে সংগঠনের চার নেতা ও আরও কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে ঘিরে ফেলেন। এ সময় তাঁকে প্রকাশ্যে ধর্ষণ ও হত্যা করার ভয় দেখান। এই ভীতিকর অভিজ্ঞতার পরদিন তিনি সিলেট কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

কিন্তু তাতেও থেমে থাকেনি দুর্বৃত্তরা। ঘটনার মাত্র তিনদিন পর, ১০ মে বিকেল ৫টার দিকে একই স্থানেই ফের তাঁকে টার্গেট করা হয়। সুমাইয়া জানান, সেইদিন তাঁকে অপহরণের চেষ্টা করা হয় এবং এক পর্যায়ে তাঁর ওপর শারীরিক হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা তাঁর সঙ্গে থাকা ১০ হাজার টাকা এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

মামলায় নাম উল্লেখ করা চারজন হলেন:

  • নুরুল ইসলাম – সিলেট জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব

  • সালমান আহমদ খুরশেদ – যুগ্ম আহ্বায়ক

  • ফখরুল হাসান – যুগ্ম সদস্যসচিব

  • রেদোয়ান মুনসি – সংগঠনের সক্রিয় সদস্য

অপর আটজনের পরিচয় অজ্ঞাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুর রহমান জানিয়েছেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন যেন কোনো প্রকার অবহেলা বা বিলম্ব না হয়।

তবে অভিযুক্তরা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম দাবি করেন, “সুমাইয়া আক্তার মুখপাত্রের পদ দাবি করছিলেন। সেটা না পেয়ে তিনি তৃতীয় পক্ষের প্ররোচনায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বানোয়াট একটি নাটক।”

ঘটনার পর সংগঠনের অভ্যন্তরে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান নিচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধে। এমন গুরুতর অভিযোগ একটি ছাত্র আন্দোলনের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে শিক্ষার্থী মহল।

ছাত্র রাজনীতির নামে এই ধরনের ঘটনা সমাজে উদ্বেগ ও অনাস্থা বাড়িয়ে তোলে। প্রশ্ন উঠেছে—একটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই যদি নারীরা নিরাপদ না থাকেন, তবে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?

এখন দেখার বিষয়, পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে কী তথ্য সামনে আনে এবং আসামিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সুমাইয়ার দাবি সত্য হলে এটি হবে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে এক ভয়াবহ নজির। আর যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলেও সেটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নগ্ন উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

Aucun commentaire trouvé