নারায়ণগঞ্জের বন্দরে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ভূমি মেলা-২০২৫, যেখানে একদিকে যেমন জমকালো আয়োজন, অন্যদিকে প্রশাসনের দৃঢ় অঙ্গীকার—দুর্নীতিমুক্ত ও হয়রানিমুক্ত ভূমি সেবা নিশ্চিত করা।
রোববার, ২৫ মে সকাল সাড়ে ১০টায় বন্দর উপজেলা ভূমি অফিস প্রাঙ্গণে বেলুন ও সাদা পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই মেলার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান। মূল আয়োজনের পূর্বে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি স্থানীয় সড়ক প্রদক্ষিণ করে, যা সেবা নিতে আগ্রহী সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা ছড়িয়ে দেয়।
ভূমি সেবা—জনগণের দোরগোড়ায়
মেলায় সেবাপ্রার্থীরা সরাসরি জমি-সংক্রান্ত নানা সেবা নিতে পারছেন, যেমন—নামজারি, খতিয়ান ও জমির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত তথ্য। ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রদর্শন করা হয়, যা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হ্রাসে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তাদের আশাবাদ
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা আক্তার ইতি। প্রধান অতিথি ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ভূমি অফিসে হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত সম্ভব হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “কোনো প্রকার দালাল বা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে নয়, জনগণ যেন সরাসরি অফিসে এসে সেবা গ্রহণ করে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
বৈচিত্র্যময় অংশগ্রহণ
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সরকার আশ্রাফুল ইসলাম, সাব-রেজিস্ট্রার কেএম মোর্শেদ আল মারুফ। এছাড়া রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরন, সাধারণ সম্পাদক লিটন, গণঅধিকার পরিষদের জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ, এবং বন্দর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন সিদ্দিকী ও নির্বাহী সদস্য মাহফুজুল আলম জাহিদ।
তাঁরা সবাই ভূমি অফিসের এই উদ্ভাবনী উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং বলেন, “এই মেলা জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের একটি কার্যকর মাধ্যম।”
পরিবেশ সচেতনতা ও গাছের চারা বিতরণ
উদ্বোধনের পরে ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং চলমান ভূমি সেবা কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ হিসেবে স্কুল শিক্ষার্থী ও সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে ফলজ গাছের চারা বিতরণ করা হয়—যা ভূমি বিষয়ক সেবা পাওয়ার পাশাপাশি সচেতনতা তৈরিতেও অনন্য ভূমিকা রাখছে।
গণশুনানি: যেখানে অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে সমাধান
মেলার সবচেয়ে ব্যতিক্রমী অংশ ছিল “গণশুনানি” কার্যক্রম, যেখানে সাধারণ মানুষের ভূমি সংক্রান্ত অভিযোগ সরাসরি শোনা হয় এবং কিছু সেবা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা হয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে এবং একটি আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সেবার মান ও স্বচ্ছতা—দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে
মেলায় অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, তারা ভূমি অফিসের এমন উদ্যোগে অভিভূত। একাধিক দর্শনার্থী বলেছেন, যদি এই ধরণের সেবা নিয়মিতভাবে পাওয়া যায়, তবে দালালের দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমে যাবে।
এই মেলার মাধ্যমে প্রশাসন ভূমি সংক্রান্ত সেবা শুধু সহজলভ্যই করছে না, বরং জনগণের সঙ্গে অংশীদারিত্বও গড়ে তুলছে, যা একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনের দিকে বড় পদক্ষেপ।