ব্লকেডের পর এবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা সচিবালয় কর্মচারীদের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়ায় সচিবালয় কর্মচারীরা ব্লকেডের পর এবার ঘোষণা করলো সোমবার কলমবিরতির। চলছে বিক্ষোভ, বাড়ছে চাপ।..

ব্লকেডের পর এবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা সচিবালয় কর্মচারীদের: ‘চাকরি যাবে কারণ দর্শানো ছাড়া’, তীব্র ক্ষোভে কলম নামাচ্ছেন তারা!

সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ সচিবালয়। ইতোমধ্যেই ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে কর্মচারীরা নতুন করে সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। তবে এবার শুধু ব্লকেডে থেমে থাকছে না তারা—ঘোষণা এসেছে আরও কঠোর কর্মসূচির: সোমবার (২৩ জুন) সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সচিবালয়ে পালিত হবে ‘কলম বিরতি’। অর্থাৎ কর্মীরা দুই ঘণ্টা কোনো দাফতরিক কাজ করবেন না।

গত বৃহস্পতিবার সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল এই অধ্যাদেশ বাতিলের জন্য। সেই সময়সীমা পার হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না আসায় রোববার পূর্বঘোষিত অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাও ও অবরোধের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করেন তারা।

রোববার সকাল থেকেই সচিবালয়ের ভেতরে-বাইরে অবস্থান নেন সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের হাতে ছিল প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড, মুখে ছিল শ্লোগান—“অধিকার চাই, বঞ্চনা নয়”, “কালো আইন মানি না, মানবো না”। আন্দোলনকারীরা বলেছেন, ‌**"এই অধ্যাদেশ আমাদের চাকরি জীবনের নিরাপত্তা ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা গোলাম নই। কারণ দর্শানোর নোটিশেই চাকরিচ্যুতি হতে পারে—এ কেমন আইন?"**

গত ২৫ মে জারি হওয়া ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুযায়ী চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধের জন্য কোনো বিভাগীয় মামলা ছাড়াই কেবল “কারণ দর্শানোর নোটিশ” দিয়ে সরাসরি সরকারি কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে। অর্থাৎ, একজন সরকারি কর্মকর্তা তার নিজের বক্তব্য বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না পেয়েই চাকরি হারাতে পারেন—যা গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন আন্দোলনকারীরা।

এ বিধান যুক্ত করা হয়েছে গত ২২ মে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় খসড়া অনুমোদনের মাধ্যমে, এরপর ২৫ মে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়।

এদিকে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এ আইন শুধু অমানবিক নয়, বরং “নিবর্তনমূলক ও কালো আইন”। তারা আশঙ্কা করছেন, এটি আমলাতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচারিতার দ্বার খুলে দেবে। একজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে যদি কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পক্ষপাতমূলকভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন, তবে তার চাকরি চলে যাবে—এমন ভয়ের মধ্যে কেউ কাজ করতে পারে না।

ঈদের ছুটির পর গত সোমবার (১৬ জুন) থেকে আন্দোলন আরও সংগঠিত হয়েছে। সচিবালয়ের নানা বিভাগ, মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই আন্দোলনে শামিল হন। রোববারের বিক্ষোভে একাধিক সংগঠনের ব্যানার দেখা গেছে—যারা সবাই এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে একাট্টা।

কর্মচারীদের হুঁশিয়ারি স্পষ্ট:এই আইন বাতিল না হলে একের পর এক কঠোর কর্মসূচি আসবে। প্রয়োজনে পুরো সচিবালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে।

তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, কোনো উপদেষ্টা বা সচিব এই কালো আইনের পক্ষে থাকলে, তার অবিলম্বে পদত্যাগ চাই

সোমবার (২৩ জুন) ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ‘কলম বিরতি’ কর্মসূচির পরেও যদি সরকার কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে আরও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি আসবে—এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে সচিবালয়ের সব বিভাগে একযোগে পূর্ণদিবস ধর্মঘট ডাকা হবে।

এদিকে প্রশাসন বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি। তবে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে উদ্ভূত অচলাবস্থা দিনদিন যে বাড়ছে, তা স্বীকার করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত সমঝোতা না হয়, তাহলে পুরো প্রশাসনব্যবস্থা কার্যত স্থবির হয়ে পড়বে।

একটি অধ্যাদেশ যে সরকারি কর্মচারীদের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ধ্বংস করতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে এই আন্দোলন। সচিবালয়ের কর্মচারীরা এখন শুধু তাদের চাকরি নয়, বরং সম্মান ও ন্যায্যতার জন্য লড়াই করছে। এখন দেখার পালা, সরকার কত দ্রুত এই অচলাবস্থা নিরসনে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়।

Nema komentara