বলিউডের নতুন স্পাই থ্রিলার ‘ধুরন্ধর’ মুক্তির পর থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। আদিত্য ধর পরিচালিত এই সিনেমায় ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে এক রক্তক্ষয়ী গোয়েন্দা যুদ্ধের গল্প চিত্রায়িত হয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ৩ ঘণ্টা ৩২ মিনিটের এই দীর্ঘ সিনেমাটিতে রণবীর সিংকে একজন ভারতীয় স্পাই হিসেবে দেখা গেছে, যার লক্ষ্য পাকিস্তানের করাচিতে ঢুকে গ্যাং নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা। সিনেমাটিতে সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয় খান্না এবং আর মাধবনের মতো তারকারা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে এর কাহিনী ও উপস্থাপন নিয়ে দুই দেশেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
পাকিস্তানে এই সিনেমার কড়া সমালোচনা হচ্ছে মূলত করাচি শহর এবং সেখানকার সংস্কৃতিকে ভুলভাবে উপস্থাপনের কারণে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সিনেমায় দেখানো করাচি বাস্তবতার ধারেকাছেও নেই; বরং একে কেবল একটি সহিংস শহর হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এদিকে, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) একজন নেতা করাচির আদালতে মামলা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, সিনেমাটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা হয়েছে এবং পিপিপি নেতাদের সন্ত্রাসীদের মদদদাতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, স্থানীয় গ্যাং কালচারকে ভারত-পাকিস্তান ভূ-রাজনীতির সাথে জড়িয়ে দেখানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
অন্যদিকে, ভারতে সিনেমাটি ব্যবসায়িক সাফল্য পেলেও আইনি জটিলতা থেকে রেহাই পায়নি। শহীদ ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর মোহিত শর্মার পরিবার দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছে। তাদের দাবি, পরিবারের অনুমতি ছাড়াই মেজরের জীবন কাহিনী এই চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও নির্মাতারা এটিকে কাল্পনিক গল্প বলে দাবি করছেন, কিন্তু সিনেমায় বাস্তব হামলার অডিও ক্লিপ ও সংবাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় বাস্তব ও কল্পনার সীমারেখা ঝাপসা হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা।
সব মিলিয়ে, ‘ধুরন্ধর’ কেবল একটি বাণিজ্যিক সিনেমা হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এটি ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বৈরিতাকে পুনরায় উসকে দিয়েছে। একদিকে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও অন্যদিকে ভুল ইতিহাস উপস্থাপনের অভিযোগ—এই দুইয়ের চাপে পড়ে সিনেমাটি এখন একটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এমনকি অনলাইনে সমালোচকদের ওপর সংগঠিত আক্রমণের ঘটনাও চলচ্চিত্র অঙ্গনে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।



















